গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১৮

তাপসকিরণ রায়

ধারাবাহিক হ্যান্টেড কাহিনী--২৬

রাতের রহস্যঘন হাওড়া ব্রীজ
                                                      

মাঝবয়সী শশীবাবু অদ্ভুত এক শখের অধিকারী। মনের অভিলাষা তিনি পূর্ণ করতে বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠেন। এমনটা হতে পারার প্রধান কারণ বোধহয় আজও পর্যন্ত তিনি অবিবাহিত বলেই। ঘর-সংসারের ঝঞ্ঝাট তার নেই, তাই তার হাতে সময় থাকে প্রচুর। এবার তাঁর এই অদ্ভুত শখের কথা খুলে বলা যাক।
হঠাৎ তিনি একদিন মোবাইল খুলে দেখলেন, কলকাতার হাওড়া ব্রিজ নিয়ে দুটো ভিডিও দেওয়া হয়েছে। তার হেডিং হল--রহস্যময় হাওড়া ব্রীজ। গঙ্গা নদীর এ ব্রীজের আশপাশের নাকি অনেক রহস্য আছে। কি সেই রহস্য ? ভিডিও খুললেন শশী বাবু। বিডিও দেখার সঙ্গে সঙ্গে যে ভাষ্য তিনি শুনতে পেলেন তা ছিল এরকম--
হাওড়া ব্রীজের ফুল মার্কেটের কাছ দিয়ে নিচে নেমে গেছে মল্লিক ঘাট। এই ফুল বাজারের ঘাটে নিয়মিত যারা ব্যায়াম করেন তারা অনেকেই নদীতে ডুবে যেতে অনেককে দেখেছেন। তাদের বিশ্বাস গঙ্গায় যারা আত্মহত্যা করেছেন অথবা ডুবে গিয়েছেন তাদেরই অতৃপ্ত আত্মারা ঘুরে বেড়ায় হাওড়া ব্রীজের আশপাশের ঘাটে। কেউ আবার সাদা শাড়ি পরা এক মহিলাকে একা বসে কাঁদতেও দেখেছেন বলে দাবি করেন।
আর একটা বিডিও হাওড়া ব্রীজ ও তার আশপাশের গঙ্গার ছবি দেখানোর সাথে সাথে বলছে-- 
হাওড়া ব্রীজ কলকাতার সুন্দর দর্শনীয়ের মধ্যে একটি। আজ আমরা আপনাদের সামনে এমন এক সত্য নিয়ে আসতে চলেছি যে আপনার হাওড়া ব্রিজ সম্পর্কে পুরো ধারণাটাকেই বদলে দেবে। হাওড়া ব্রীজ কলকাতার সুন্দরতম জায়গা গুলোর মধ্যে একটি, কিন্তু আপনারা কি জানেন এই হাওড়া ব্রিজ কলকাতার ভয়ানক জায়গাগুলির মধ্যেও একটি? বিশেষ করে হাওড়া ব্রীজের কাছে গঙ্গার ঘাটগুলির কাছে ঘটেছে অনেক অস্বাভাবিক মৃত্যু। শোনা যায় এ অঞ্চলের আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা ও অস্বাভাবিক মৃত্যু অনেক ঘটে গেছে। তাদের অধিকাংশ অতৃপ্ত আত্মারা ঘুরে বেড়ায় এই সব অঞ্চলে। মাঝেমধ্যেই নাকি এ অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় কিছু অস্বাভাবিক চেহারা। সকালবেলা গঙ্গার জানানা ও মল্লিক ঘাটে স্নানার্থীদের মুখে শোনা যায় সেখানে নাকি জলের মধ্যে থেকে ভেসে ওঠে কিছু হাত, তাদের কাছে সাহায্য চায় কিন্তু এটা বুঝতে পারা যায় না যে সেগুলি কোন মানুষ নাকি আত্মা !’’  

ভৌতিক রহস্য ব্যাপারটা জানবার পরই শশীবাবুর বিশেষ শকে যেন টান পড়ল। তার অদ্ভুত শকতাই তো হল এইসব ভৌতিক রহস্যের খোঁজ নেওয়া--তার সত্যাসত্য যাচাই করা। এর আগেও বহুবার এমনটা ঘটেছে, যেখানেই তিনি শুনেছেন ভুত ও ভৌতিক-অলৌকিক কিছু ঘটনার কথা সেখানেই বন্ধুদের নিয়ে বেমালুম গিয়ে হাজির হয়েছেন। শশী বাবুর যদিও জুটি জুটে যেতে দেরি হয়নি। পাড়ার অর্ণব বাবু আর জনান্তিক বাবু হলেন তাঁর বন্ধু ও জুটি। প্রায় সময় শশী বাবুর সঙ্গ দেন তাঁরা। তাদের জীবন হল সাদামাটা। অর্ণব বিপত্নীক আর জনান্তিকের স্ত্রী আছেন কিন্তু ছেলেপুলে না হওয়ায় সংসার নিয়ে তিনি ততো জড়িয়ে      পড়েননি।
সেদিন শশী বাবু ফোন করে অর্ণবকে জানালেন-- ‘চল না, এক জায়গায় যাবি ?
--‘কোথায় বস ?’
অর্ণব বললেন, ‘হাওড়া ব্রিজ।
--‘সে তো বহুবার পার করেছি গুরু !’
--‘এবার আমরা রাত করে যাব--’
--এ্যাঁ, আবার ভুতুড়ে কেচ্ছা পরখ করতে নাকি ?’
--‘হ্যাঁ, চল না--’
--’কবে যাবি বল ?’
--‘সময় হলে আজ রাতেই চল--’
--‘ঠিক আছে চল গুরু !’
জনান্তিককে জানাতে তিনি এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন । এ সব একটা নেশা বলা যায়। অফুরান সময়ের সদ্ব্যবহার যাকে বলে। সময় যেমন কাটবে তেমনি রহস্য-রোমাঞ্চকর রোমহর্ষক কিছু ঘটনার সাক্ষাৎকার ঘটবে। ইহলোকের চাক্ষুষ ঘটনায় তো বিশেষ কোন বৈচিত্র্য থাকে না। তাই অলৌকিক অনজান কিছু রহস্যের পেছনে কিছুটা সময় দিলে ক্ষতি কি ?
রাত তখন দশটা হবে। শশীবাবু ও তাঁর বন্ধুরা তাদের নিজস্ব বাড়ি বেহালা থেকে পৌঁছালেন হাওড়া স্টেশন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে মাত্র পঞ্চাশ ষাট মিটারের মত পথ হাওড়া ব্রিজ। এখনও এখানে লোকজনের কমি নেই। যদিও এখানে ভিড় খুব হালকা। তবু লোকজন দ্রুত কমতে শুরু করেছে। এমনিতে এখানে রাতভর লোকজনের আনাগোনা চলতেই থাকে।
শশীবাবু ওঁরা হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালেন মল্লিক ঘাটের ফুল মার্কেটে। বেশির ভাগ ফুল দোকানদার দোকান বন্ধ করে চলে গেছে। এখান থেকে কপা গিয়ে ধাপে ধাপে নেমে গেছে গঙ্গার সেই মল্লিক ঘাট। পাশে একটা চত্বর মত জায়গাও রয়েছে। পরে শশী বাবু জানতে পেরেছিলেন যে ওটা হল ব্যায়াম চত্বর। ওখানে সকাল-বিকেলে ব্যায়ামবীররা শরীর চর্চা করেন। এ সময় ওটা একেবারে শূন্য পড়ে আছে। এক বৃদ্ধ ফুলবালা দোকানে বসে ঝিমাচ্ছিলেন। শশী বাবুদের দেখে তিনি তাঁদের দিকে তাকালেন, বললেন, ‘বলুন ?’
শশী বাবু বললেন, ‘দাদা, আমরা ফুল নেব না, আপনার সঙ্গে একটু দরকার ছিল। 
দোকানদার বিরক্ত হলেন না। আগ্রহ নিয়ে বলে উঠলেন, ‘কি দরকার বলুন ?’
শশী বাবু এবার মৃদু হেসে বললেন, ‘আমরা এখানকার ভৌতিক ব্যাপারগুলোর সত্যাসত্য জানতে এসেছি।
বৃদ্ধ দোকানদার এবার মুখ তুলে শশী বাবু ও তাঁর বন্ধুদের দিকে তাকালেন। কিছু একটা আন্দাজ করার চেষ্টা করে বললেন, ‘আপনারা কি এ ব্যাপারে কিছু গল্প- গুজব শুনেছেন ?’
--‘ওই সাদা কাপড় পরা মেয়েছেলেটার কথা’--শশী বাবু বললেন। 
--‘গঙ্গার জল থেকে দুটো হাত নাকি উঠে আসে ?’ এবার জনান্তিক বলে উঠলেন। 
বৃদ্ধ দোকানদার বললেন, ‘দেখুন, আমি কোনদিন সে সব দেখি নি, তবে--’
অর্ণব আগ্রহ নিয়ে বললেন-- ‘তবে, কি বলুন ? --’
বৃদ্ধ বললেন, ‘তবে আমি তার কথা ও  কান্নার আওয়াজ শুনেছি। 
শশী বাবু আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘কিছু দেখেননি কি আপনি ?’
দোকানদার বললেন, ‘না, আমি এত সাহস ভরে দেখতে যাইনি, বিশ্বাস করি এই মাত্র। 
জনান্তিক মুখ খুললেন, ‘আর ওই গঙ্গার জল থেকে হাত তোলা--’
বৃদ্ধ দোকানদার বললেন, ‘ওটা আর আমি ঠিক বলতে পারব না, তবে অনেকে দেখেছে বলেছে।
শশী বাবু বললেন, ‘আচ্ছা এখানকার কেউ দেখেছেন এমন কেউ কি আপনার জানা আছে ?’
দোকানদার ভদ্রলোক এবার মাথা ঝুঁকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে পাশের কোন দোকানের দিকে তাকালেন। তারপর সে দিকে আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘ওই যে জীতেন দোকানে বসে আছে।  ও বলে, ও নাকি দেখেছে।  আপনারা যান ওর কাছে, ও গল্প করার লোক, সবকিছু আপনাদের বলবে।
শশীবাবুরা এবার জীতেন বাবুর কাছে গেলেন। ভদ্রলোকের বয়স পঞ্চাশের  কাছাকাছি হবে বলে মনে হল। ফুলের খরিদ্দার ভেবে তিনি তাকালেন ওঁদের দিকে। শশী বাবু বিনয়ের সাথে বললেন, ‘ওই দোকান থেকে আপনার কথা বললেন--’
--‘বলুন কি বলবেন ?’ জিতেন বললেন।
অর্ণব তৎপর হয়ে বলে উঠলেন, ‘বলছিলাম কি আপনি নাকি এখানকার ভৌতিক ব্যাপারে অনেক কিছু জানেন ?’
জীতেন বাবু প্রশ্ন শুনে খানিক চুপ করে থাকলেন। তারপর মাথা নেড়ে বললেন, ‘হ্যাঁ জানি।
শশী বললেন, ‘আমাদের ব্যাপারটা একটু বলবেন ?’
জীতেন বললেন, ‘আজ পূর্ণিমা বা অমাবস্যা না তো ?’
অর্ণব বললেন, ‘তা তো জানি না--তবে বলে দিতে পারব। তিনি তার মোবাইল নিয়ে দেখে বললেন, ‘আরে আজ তো পূর্ণিমা !’
আগ্রহ নিয়ে জীতেন বাবু বলে উঠলেন, ‘তবে এখনই চলুন আমার সঙ্গে--’
দোকান ছেড়ে দিয়ে জীতেন বাইরে এসে দাঁড়ালেন।
জনান্তিক বললেন, ‘দোকান ?’
--‘ও থাক, কিছু হবে না--’, জীতেন বললেন, ‘আসুন পাশেই মল্লিক ঘাট আছে। সেখানে একবার যাই--’
শশী বাবু আগ্রহ নিয়ে বললেন, ‘কি ? এখন দেখতে পাওয়া যাবে নাকি ?’
--‘চলুন পূর্ণিমা, অমাবস্যার রাতে ওকে দেখা যায়।কথা বলতে বলতে জীতেন বেশ পা চালিয়ে হাঁটছেন।
পাশেই গঙ্গা ঘাটের সিঁড়ি গঙ্গা পর্যন্ত নেমে গেছে। ওরা সবাই মনের মাঝে রোমাঞ্চ নিয়ে দ্রুত পায়ে নেমে গেলেন মল্লিক ঘাটে। ঘাটে টিমটিমে কম পাওয়ারের হবে একটা আলো জ্বলছিল। চারদিক আলো আঁধারির থমথমে ভাব। জীতেন এবার গঙ্গা ঘাটের বাঁ দিকের পারে তাকিয়ে বলে উঠলেন, ‘ওই যে দেখুন--’
তিন বন্ধু তাকিয়ে দেখলেন, ওঁদের থেকে বেশ কিছুটা দূরে সত্যিই একটা মেয়েছেলে বসে আছে, কোন পাথর বা মাটির ঢিবির উপর। তিন বন্ধুর শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। আর আশ্চর্য, আবছা আলোর মধ্যেও চাঁদের আলোয় হতে পারে মেয়েটিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ! তখন মাথার ওপর হালকা কালো মেঘের ওপর আকাশে মাঝ রাতের চাঁদ রয়েছে। অদূরে স্থির এক নারীমূর্তি বসে আছে।  আর কয়েক মুহূর্ত পর বন্ধুরা সবাই কেঁপে উঠলো যখন ওঁরা সে নারীর  কণ্ঠের সুর শুনতে পেলেন। সেই গাইছে, স্পষ্ট কথা বোঝা যাচ্ছিল না, কোন গানের সুর তাও ধরা যাচ্ছিল না, তবে একটা গানের সুর হাওয়ায় ভেসে আসছে। সে সুরের মাঝখান থেকে কেটে কেটে যাচ্ছিল। অর্ণব হঠাৎ ভয়ে  শশী বাবুর একটা হাত চেপে ধরলেন, বললেন, ‘চল আর না--’
--‘একটু দাঁড়া না--’, ফিসফিস করে বলে উঠলেন শশী।
জীতেন ফিসফিসিয়ে বললেন, ‘গান ভাল লাগছে আপনাদের ?’
জনান্তিক বললেন, ‘গান, মানে--ভালো বুঝতে পারছি না--’
জীতেন কেমন উদাসী স্বরে বলে উঠলেন, ‘আমার কিন্তু খুব ভালো লাগে। জানেন, আমি এই
ঘাটে এসে ওর গান শুনি--’ 
জনান্তিক অবাক হলেন, বললেন, ‘বলেন কি ? ভয় লাগে না আপনার ?’
--‘না আমি একা একা চলে আসি--জানেন তো সমত্ত বউ ছিল--স্বামীর সঙ্গে গঙ্গায় নাইতে এসেছিল।  সে সময়টা ছিল ভোরবেলা। লোকজন বেশি একটা ঘাটে ছিল না। ভাটার টান চলছিল হবে, বউটা নদীতে নামতেই নিচে টেনে নিলো। স্বামীটা পাশে থেকে কিছুই করতে পারল না। সেবাঁচাও, বাঁচাওকরে চীৎকার করে ছিল। আর স্ত্রীর নাম ধরে ডেকে উঠছিল।
শশী বাবু জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওই সময় আপনি ছিলেন নাকি ঘাটে ?’
জীতেন ভাঙা স্বরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘হ্যাঁ, ছিলাম, তখন বউটা লাল শাড়ি পরা ছিল। 
জনান্তিক ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘একা এখানে আসেন, ভয় করে না ?’
জীতেন ধীরে ধীরে বললেন, ‘না, আমার তো--’, এটুকু বলে তিনি চুপ করে গেলেন। 
শশী বাবু বললেন, ‘কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন কি আপনি ?
জীতেন আবেশ জড়ানো গলায় বলে উঠলেন, ‘আমার মনে হয় একদিন ওর কাছে গিয়ে জানতে চাই--’
অর্ণব অনেকটা মোহগ্রস্তের মত বলে উঠলেন, ‘কি, কি ?’
--‘তার মনের দুঃখ--জানেন, মরে যাবার পরে তার মৃতদেহ আমি দেখেছিলাম। কি সুন্দরই না তার চেহারা ছিল- রঙ যেন তার ফেটে পড়ছিল !’
না, শশীবাবুর মনে হল যে এখানে আর না থাকলেই ভালো হয়। এই আবছায়া অন্ধকারের মাঝে সবাই যেন ওই নারীর সুরের মূর্ছনায় আবেশিত হয়ে পড়ছিল। কেমন যেন নেশা নেশা একটা ভাব লাগছিল তাঁর !
এবার জনান্তিক ভয়ের মধ্যেই আবেশিত জড়ানো গলায় বলে উঠলেন, ‘বাহ কি সুন্দর গান !’
শশী বাবু বুঝলেন, না, এখানে আর থাকা ঠিক হবে না। তিনি এবার জোর দিয়ে বলে উঠলেন, ‘এবার আমরা যাব।সামনের সিঁড়ি দিয়ে শশীবাবু দু-তিন সিঁড়ি ওপরে উঠে গেলেন। তিনি দেখলেন, বন্ধুরা ও জীতেন ওদের সবাইকে মনে হল কেমন যেন জড়তাগ্রস্ত। কেউ এ জাগা ছাড়তে চাইছেন না। এখন ফিরব না, এ কথাও বলতে পারছেন না। শশীবাবু সিঁড়ির আরও কয়েক ধাপ ওপরে উঠে বললেন, ‘আর না, আয়রে সবাই আয়--’
এবার সবাই সিঁড়ি ধরে উপরে উঠছেন। জীতেন সবার শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আপনারা যান, আমি আসছি--’
বন্ধুরা উঠে এলেন উপরে। বৃদ্ধ দোকানদার তেমনি দোকানে বসে ঝিমচ্ছিলেন। ওঁদের পায়ের আওয়াজ পেয়ে তাঁর ঝিমঘুম ভেঙে গেলো। তাকালেন তিনি, বললেন, ‘দেখলেন?’
মাথা নাড়ালেন শশী বাবু। দোকানদার বললেন, ‘ওই জীতেন কিন্তু পেত্নীর প্রেমে পড়েছে।
শশী অবাক হয়ে বললেন, ‘তাই নাকি ?’ তারপর একটু থেমে আবার বললেন, ‘আপনি তো কিছু দেখেননি ?’
এবার বৃদ্ধ দোকানদার আস্তে আস্তে বলে উঠলেন, ‘একদিন খুব ভোরে স্নান করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছিল জলের তলা থেকে কেউ যেন তার দু হাত ভাসিয়ে আমায়বাঁচাও, বাঁচাওইশারা করছে, তখন ভোরের আলো স্পষ্ট ফুটে ওঠেনি তাই ভ্রম হয় সেদিন কি দেখতে কি দেখেছিলাম কে জানে !’
শশী বাবু বললেন, ‘আচ্ছা তাই বুঝি আপনি বলছিলেন, আপনি কিছু দেখেননি বলে ?’
বৃদ্ধ দোকানদার তখনও আনমনা হয়ে বলে চলেছেন, ‘তবে সত্যিও হতে পারে--হাওড়া ব্রিজের আশপাশের গঙ্গায় ডুবে মরে যেতে তো অনেককেই দেখলাম--আত্মহত্যা করতেও অনেক দেখেছি।