গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ৬ জুন, ২০১৮

পার্থ রায়


গোধূলির রঙ
-  হ্যালো! সুইট প্রিন্সেস!!

একটা পরিচিত বয়স্ক কণ্ঠস্বর শুনে, চমকে পেছন ফিরে তাকাল তিতলি। আরে এতো সেই রাজধানী এক্সপ্রেসের বুড়ো লোকটা। তখন কিন্তু বুড়োটা বলেছিল, “আবার দেখা হয়েও যেতে পারেখুসট বুড়োটা পিছু নিয়েছে না কি? বিশ্বাস নেই, বুড়ো হলে ভীমরতি হয়। তায় আবার তিতলি চোখে পড়ার মতো সুন্দরী।   
ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির অন্যতম ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লী ইউনিভার্সিটিতে প্রেজেনট গ্লোবাল সিনেরিও অব ইকনমির উপরে একটা সেমিনার অ্যাটেন্ড করতে এসেছে তিতলি। বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদরা লেকচার দেবেন।এমএসসির ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্টদের কাছে এই সেমিনার একটা মহার্ঘ বস্তু। স্টুডেন্ট হিসেবে তিতলি বরাবরই ব্রিলিয়ান্ট।
ট্রেনে ভদ্রলোক একই কামরায় ছিলেন। প্রথমদিকে তিতলির একটু গায়ে পড়া মনে হয়েছিল। কিন্তু পরে, বেশ জমে গিয়েছিল। নরম সিল্কের মত চুলগুলোতে একটাও কালো চুল নেই। মাথার চুলের মতোই ধবধবে সাদা ধুতি পাঞ্জাবী। অনেকটা পশ্চিমবাংলার প্রাক্তন এক মুখ্যমন্ত্রীর মতো। না, না সৌমিত্র চ্যাটার্জীর মতো। তবে, রিমলেস চশমা ভেদ করে দুটো বুদ্ধিদীপ্ত চোখের সব সময় হাসি-এটা এই বুড়োটার স্পেস্যালিটি। তিতলি মনে মনে বলল, “ বুড্ঢা, দিনেকালে তুমি অনেক সুন্দরী মেয়েদের মাথা খারাপ করেছ, কিন্তু আমার সাথে পাঙ্গা নিতে এসো না তাই বলেএমন মজার মজার কথা বলছিলেন, তিতলির বেশ ভাল লেগে গিয়েছিল। তিতলির কাছে মনোযোগী ছাত্রের মতো হোয়াট্স অ্যাপ, মেসেঞ্জার করা শিখলেন, তিতলি উনার ফোনে ওইগুলো ডাউনলোড করে দিল। আবার হেড ফোন শেয়ার করে একসাথে গানও শুনেছেন। হ্যা, তিতলি আর সাথের গোমড়ামুখো অর্ণবকে দারুন বিদেশী চকোলেট গিফট দিয়েছেন। পরে মনে হয়েছে, ভাগ্যিস বুড়োটা ছিল, অর্ণবটা তো একটা বোর। যদিও তিতলির অনেক কথা উনি জেনে নিয়েছিলেন, নিজের পরিচয় সে রকম কিছু দেন নি। ফোন নাম্বার ইন্টার চেঞ্জ করার সময়  কি নামে সেভ করব জিজ্ঞাসা করাতে হেসে উত্তর দিয়েছিলেন, “মাই ওল্ড ম্যান
-   কি ভাবছ? দেখলে তো দেখা হয়ে গেলো আবার।
-   হ্যা, তাই তো দেখছি। তুমি এখানে?? এই ইউনিভার্সিটিতে কেউ আছে বুঝি? ( তিতলি মুখ স্লিপ করে তুমি বলেছিল। উনি বলেছিলেন, “ইট উইল ডু, সুইট প্রিন্সেস। রাদার ইটস মাই প্লেজার টু উ উ উ    
-   কেন সুইট হার্ট? তোমার সাথে দেখা করতে আসতে পারি না?
তিতলির মতো আধুনিকার মুখেও লালাভ। কিছু বলার আগেই, পাশে দাঁড়ানো সদ্য আলাপ হওয়া জে এন ইউ-র সিমরন কানের কাছে বিস্ফারিত চোখে ফিসফিস করে বলল, “হেই, ডোন্ট ইউ নো হিম? তুমি কোলকাতার মেয়ে হয়ে উনাকে চেন না, উনি ওয়ার্লড ফেমাস ইকোনমিস্ট ডাঃ অশোক সান্যাল। হি ইজ দ্য সেন্টার অব অ্যাট্রাকশন অব দিস সেমিনার
তিতলির মুখ তিমি মাছের মতো হা হয়ে গেল। উনার বই পড়ছে ও গ্র্যাজুএশন লেভেল থেকে। ইতিমধ্যে, ভাইস চ্যান্সেলর নিজে অন্য প্রফেসরদের নিয়ে উনাকে রিসিভ করতে ছুটে এসেছেন।
 চলে যাবার আগে রাজেশ খান্নার মতো দুটো আঙ্গুল তুলে, সেই হৃদয় ভেদ করা চোখের হাসি উপহার দিয়ে গেলেন।
আরও লাল হয়ে যেতে যেতে তিতলির ভেতর থেকে আর একটা তিতলি বলল, “ইউপ, মাই ওল্ড ম্যান! পরের জন্মে আমার প্রথম আর শেষ প্রেমিক তুমি। তোমার অর্থনীতির সাথে আমার প্রেমনীতির কমবোটা খুব একটা খারাপ হবে না
সূর্যটা ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসটা ছেড়ে চলে যাবার আগে গোধূলির সব রঙ তিতলির মুখে মাখিয়ে দিয়ে গেল।