গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ৬ জুন, ২০১৮

নীহার চক্রবর্তী


অনুপম-বেলা

দরজা ভেজানো ছিল । 
শমি দরজা খুলে একটু ঘরের ভেতরে ঢুকতেই দেখল খাটের ওপর ওর মা-বাবার অন্তরঙ্গ দৃশ্য  । দেখেই ও ছিটকে বাইরে বেরিয়ে এলো ।
সেইথেকে শমি খুব সঙ্কুচিত । 
দ্বিধায়-দ্বিধায় জর্জরিত একেবারে । পরে মার মুখোমুখি হলেও মুখ তুলে কথা বলতে পারলো না তার সাথে । মা বেশ অবাক ।
জিজ্ঞেস করলো শমিকে,''কী হল তোর ? অমন করে আছিস কেন ?''
কিন্তু শমি পরিষ্কার কিছু বলতে পারলো না তাকে । 
শুধু আমতা আমতা করে বলল তাকে,''কিছু না গো । কিছু না ।''
মার বিস্ময় আরও বেড়ে গেলো তাতে ।
শমির বাবা কম কথা বলার মানুষ । 
খুব ব্যস্ত সে নানা কাজে । তাই তাকে নিয়ে শমির সমস্যা কম । সারাদিনে খুব কম দেখা হয় তার সাথে । কিন্তু মা ছাড়া শমির গতি নেই । মা খুব খোলা-মেলা মনের মানুষ । শমির ঘরে-বাইরের সব কথা তারই সাথে । কিন্তু এখন কী উপায় ? খুব ভাবতে থাকলো শমি । না বলে শান্তি নেই ওরকিন্তু সে বুঝি বলা যায় ।
মার বিস্ময়ের মাত্রা ক্রমশ চড়তে থাকলো ।
শমি আর কোন কথা না বলায় সেও কথা বন্ধ করে দিলো ওর সাথে । কিন্তু সে ত সয় না শমির । তাই সকালের সব কথা বলে দিলো তাকে ।
মা শুনে স্মিত হাসল ।
সে বলল শমিকে,''আমাদের ভুল তো বটেই । দরজায় খিল দেওয়া উচিৎ ছিল । তবে আর একদিক থেকেও ভাবা যায় ।''
খুব আগ্রহের সঙ্গে শমি তাকে বলল,''আর কোন দিক,মা ?''
মা ভাবতে শুরু করলো তারপর । 
ভাবতে ভাবতে শেষে সে অনাবিল-হেসে বলল,''আমরাই তো তোর ইহলোকের দেব-দেবী । তাই না ? মনে কর দেখে ফেলেছিস দেব-দেবীর এক অনুপম প্রেমের দৃশ্য । খারাপ কিছু বললাম ?''
মার কথা শুনে শমি উল্লাসে ফেটে পড়লো । ও মাকে সবেগে আর আবেগে বুকে চেপে ধরল । মা তখনর সারা মুখে তখন যে কত আকাশ ছবি ।
কিন্তু সব শেষে শমির মা বেশ আনমনা হয়ে বলল শমিকে,''তবে অত সস্তা না । এ একবারই দেখা ভালো । তারপর এর আর মূল্য বলে কিছু থাকবে না । লজ্জায় বলছি না । দম্ভে বলছি । বুঝে নিস পরে । আসি এখন ।''
মা চলে গেলে শমি অপার-বিস্ময় নিয়ে মার কথাগুলো ভেবে গেলো । ভেবেই গেলো । সে অনেকক্ষণ । অনেকক্ষণ সে ।