গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

নীহার চক্রবর্তী

শাস্তি


মিনু বলে গেছিলো চারদিন পর কাজে আসবে । 
ওর দিদির মেয়ে পলির বিয়ে । কিন্তু এলো ছদিন পর । আবার ও কাজ করতে এলে রজতের বৌ স্মিতা মুখে যা এলো শুনিয়ে দিলো । মিনু কিন্তু কিছু বলল না । শুধু মিটমিট করে হেসে গেলো । দেখে আরও রাগ হল স্মিতার ।
বেশ চড়া মেজাজে বলে উঠলো,''তোমার কাল থেকে আর আসতে হবে না । কোথায় কাজ পাও আমি দেখছি । কি যে কষ্ট আমার ।'' 
তবু মিনু সেই আগের মতো হেসেই গেলো ।
তারপর কাজ শুরু করলো মিনু । 
রজতের বৌ স্মিতার মুখে রা নেই । রাগে ফুঁসেই যাচ্ছে ।
কাজ করতে করতে মিনু বলতে থাকলো আপন মনে,''আমাদের মেয়েটার বেশ ভালো কপাল,বৌদি । কি দারুণ বর পেয়েছে গো । ঘরও খুব সুন্দর । কত কষ্ট করে গেলো বাপের ঘরে ।''
সব শুনেও স্মিতা একটি কথা উচ্চারণ করলো না । বেশ অবাক হল মিনু । আবার মেয়ের কপালের প্রশংসা করতেও ছাড়ল না ।
মিনুর কাজ শেষ । এবার ঘরে ফিরবে ।
রজতের বৌ স্মিতার কাছে এসে মুখ কালো করে বলল,''কাল থেকে তবে আর কাজে আসছি না,বৌদি ।''
''
কেন ? কেন ?''
বেশ আতঙ্কের সঙ্গে বলে উঠলো স্মিতা ।
মিনু তখন এক চিলতে হেসে উত্তর দিলো,''আপনি রাগের মাথায় আমাকে অনেককিছু বলেছেন । সে হতেই পারে । আপনার অবস্থা হলে আমিও বলতাম । কিন্তু একজন মেয়ে হয়ে আপনি কীভাবে আর এক মেয়ের সুখের কথা উপেক্ষা করেন ? আপনি না মেয়ে ? বৌ না ? একটা কথা পর্যন্ত বললেন না আমাদের পলির কপালের কথা শুনে । ছিঃ,ছিঃ... পেন্নাম হই,বৌদি গো । আসি ।''
তারপরেই মিনু দ্রুত রজতদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো । 
মহাসাগরীয় বিস্ময় নিয়ে রজতের বৌ স্মিতা এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলো । তখন গুটিগুটি পায়ে রজত পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে স্মিতার পাশে এসে দাঁড়ালো ।
ও মুখে চাপা হাসি নিয়ে বলল স্মিতাকে,''সব শুনেছি আমি । যেমন কর্ম,তেমন ফল । কদিন ভাবো মিনু তোমাকে কিসব বলে গেলো । পরে আবার নতুন কাজের লোক দেখছি ।''
বলেই রজত আবার ঘরে চলে গেলো । এবার যেন সত্যি-সত্যিই স্মিতার মাথায় অদৃশ্য আকাশ থেকে একের পর এক বাজ পড়তে থাকলো ।