গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭

সঙ্ঘমিত্রা রায়

জলাঞ্জলি


 চলছে শ্রাবণ মাস। এই মাসে ঢল নামে ভোলেবাবার ভক্তদের আচ্ছা আমরা যখন ছোটো ছিলাম তখন তো এই রকম দেখিনি? এটা নতুন যুগের চল।ছেলে মেয়ে সব একসাথে বাঁক কাঁধে নিয়ে গাইতে থাকে "বল বম" আমার শ্বশুরবাড়ির সামনেই বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র। পাশেই গনেশ মন্দির, এই জায়গাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই সুন্দর।শ্রাবণ মাসে ব্রহ্মপুত্রের পাগল করা রুদ্ররুপ।এই সময় নদ এর ওপার দেখা যায় না শুধু বিস্তীর্ণ জলরাশি।সারাদিন চলে মানুষের ভীড় জল এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে।প্রতি রবিবার সন্ধ্যে থেকে চলে নদে স্নান করে জল নেওয়ার পালা ,তারপর বাঁক কাঁধে নিয়ে ভক্তরা যায় মহাভৈরব মন্দিরে বাবার মাথায় জল ঢালতে। তেমনই চলে সন্ধ্যে থেকে রাত অবধি ভক্তদের খাওয়ানোর পালা।শহরের গন্যমান্য ব্যক্তিরা ভাবেন এই ভক্তদের খাওয়ালে অনেক পূন্য হবে,শুরু হয়ে যায় তাদেরও পূন্যার্জনের তোড়জোড়। কেউ লুচি পায়েস, কেউ খিচুড়ি লাবড়া,আবার কেউবা পোলাও পনিরের আয়োজন করে ফেলেন। পাশের পাড়ার সনাতন প্রতি বছর বৌকে নিয়ে এই শ্রাবণে বাবার মাথায় জল ঢালতে আসে। এবার তাদের তিন বছরের ছোট্ট ছেলে শংকর বায়না ধরেছে মা বাবার সাথে বাঁক কাঁধে সেও আসবে জল ঢালতে, আর ভালো ভালো খাবে।সনাতনের সংসার চলে কোনমতে রিকশা চালিয়ে, ভাল খাওয়ানোর ইচ্ছে থাকলেও খাওয়াতে পারেনা।সনাতন ভাবলে ভালোই হলো এই সুবাদে বাচ্চাটা ভালো মন্দ খেতে পাবে।যথারীতি সন্ধ্যে লাগতে না লাগতেই মহানন্দে বাঁক কাঁধে নিয়ে শংকর চলল বাবা মায়ের সাথে ভোলেবাবাকে সন্তুষ্ট করতে।গনেশঘাট লোকে লোকারন্য মেলাও বসে গিয়েছে আর চারপাচ জায়গায় চলছে ভান্ডারা।সনাতন একটি ভান্ডারার সামনে দাঁড়িয়ে লুচি আর সুজি পেলো।শংকর খুশিতে আটখানা কি স্বাদ এই লুচি সুজির।কিছুক্ষণ মেলায় ঘোরাঘুরি করে আবার আর একটি ভান্ডারার সামনে দাঁড়িয়ে খিচুড়ি লাবড়া আর পায়েস পেলো সেটাও আনন্দে খেলো তিনজনে।চললো আবার ঘন্টা খানেক মেলায় ঘোরা।আর এক ভান্ডারায় পোলাও দিচ্ছে শংকরের পেটে আর জায়গা নেই,কিন্তু পোলাও এর লোভ সামলানো যায় না,যাইহোক সেটাও অল্প করে খেয়ে নিল সবাই।রাত প্রায় এগারোটা বাজে,ছেলেকে নিয়ে এবার স্নান এর পালা।নদের ঘাটে অজস্র লোকের ভীড় সবাই স্নান করে বাঁকের ঘটিতে জল ভরছে।সনাতন বৌ ছেলেকে দু হাত দিয়ে চেপে ধরে জলে ডুব দিলো।হঠাৎ করে শংকর মায়ের হাত থেকে পিছলে গেলো।ব্রহ্মপুত্রের আন্ডার কারেন্ট হয়তো ওকে টেনে নিল কিছুবোঝার আগেই।সনাতনের বৌ চিৎকার করে উঠলো শংকর ,,,,,,,,,,শংকর, ,,,,, চারিদিকে হূলূস্তুলু পরে গেলো সবাই শংকর কে বাঁচানোর জন্য উঠে পরে লাগলো।কিন্তু শ্রাবণের প্রবল জলরাশিতে কেউ শংকরকে খূঁজে পেলোনা।

সনাতনের আর্ত চিৎকারে ভরে উঠলো চারিদিক। এই খোঁজাখুঁজির পালা চলতে চলতে একসময় দেখা গেলো রাতের কালো অন্ধকার ভেদ করে ভোরের নরম আলো ছড়িয়ে পরেছে চারিদিকে।আকাশে ভোরের আলো কিন্তু সনাতনের সংসারে নেমে এল বিষাদের কালো ছায়া