গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৪

৪র্থবর্ষ ১ম সংখ্যা।।২২নভেম্বর২০১৪।।৫ইঅগ্রহায়ন১৪২১

এই সিংখ্যায় ৮টি গল্প ।  লিখেছেন - শৌনক দত্ত (ধারাবাহিক), সাঈদা মিমি, তাপসকিরণ রায়, অনিন্দিতা সাধুখান, দেবাশিস সেনগুপ্ত, দোলনচাপা ধর, মনজিৎ কুমার দাশ,ও মুজিবুর রহমান ।

               সব লেখা পড়ুন সূচিপত্রে ক্লিক করে

সম্পাদকীয়


‘গল্পগুচ্ছ’ তার তিন বছরের পথচলা শেষ করে চতুর্থবর্ষে পৌছে গেলো । বর্তমান সংখ্যাটি ‘গল্পগুচ্ছ’র চতুর্থবর্ষের প্রথম সংখ্যা । গল্পগুচ্ছর এই পথ চলায় যেসব লেখক-লেখিকা, পাঠক-পাঠিকা, গল্পগুচ্ছর সঙ্গে থেকেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই । প্রত্যাশা করি গল্পগুচ্ছ আরো বেশি মানুষের সাহচর্য পাবে, তার চতুর্থ বর্ষের পরিক্রমা আরো বেশি অর্থবহ হয়ে উঠবে । সঙ্গে থাকুন ।

শৌনক দত্ত



সন্ন্যাস ভুগোল (৪র্থ পর্ব)

আগামী সপ্তাহে পরিক্রমায় বের হবার ঘোষণা গাঁজার আসরে নিস্তব্ধতার বুঁদ নেশা ছড়িয়ে দিলো।নিউকোচবিহার আসার পর থেকে মধুবাবা এই ডেরা ছেড়ে কোথাও যাননি।এই প্রথম বের হবার কথা জানাতেই একরাশ শূন্যতা যেন উড়ে এলো । এক ছিলিম টেনেই বাবা উঠে দাঁড়ালেন। আকাশে ঝকঝকে তারা দেখে বোঝার উপায় নেই একটু আগে বৃষ্টি ছিলো। মায়া সব মায়া হেঁ.. বলতে বলতে মধুবাবা হাতের মালা জপতে জপতে হাঁটতে লাগলেন। পিছন পিছন ঝুটে যাচ্ছে পথচারী । শ্মশানে এসে দাঁড়ালেন মধুবাবা । গত শরতে এখানে যা দেখেছিলেন আজ তার সমাধান পেয়ে মধুবাবা যেন আজ আরো বেশি মর্মাহত।আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে তিনি মা মা গো বলে বসে পড়লেন মাটিতে।সঙ্গে আসা সবাই হতবাক। আকাশের তারা যেন অন্যসব দিনের চেয়ে আজ বেশি উজ্জ্বল।যেন নেমে আসতে চাইছে । মধুবাবা একজনের কানে মুখ রেখে কি বলতেই সে ছুট লাগালো । মধুবাবা উঠে গিয়ে শ্মশানের পোড়া আধ পোড়া খড়ি জড়ো করতে লাগলেন । একজন বলো বাবা আমরা হাত লাগাবোলাগাও লেকিন ডরনা মথ।যজ্ঞ করবো।ভয় লাগলে এসো না। হাতে হাতে অনেক খড়ি জমা হয়ে গেলো। যে দৌঁড়ে গেছিলো তার সাথে মধুবার চ্যালারা হাতে কিসব যেন। কাছে আসতেই বোঝা গেলো যজ্ঞ সামগ্রী । যজ্ঞেশ্বর হর হরি জপতে জপতে যজ্ঞেশ্বর কে আহ্বানকরে অগ্নি প্রজ্জ্বোলিত করলেন মধুবাবা।এক পাশে তিনি পৌরহিত্য করছেন আর তিন পাশে তিন চ্যালা মন্ত্রাহুতি দিচ্ছেন । কেউ ঘি, কেউ যজ্ঞ সামগ্রী যা যব,তিল,ঘি,হলুদ,আতবচাল আর ছোট্ট ছোট্ট চন্দন কাঠে মিশ্রিত। যজ্ঞের খবর কিভাবে যেন বাতাসে ছড়িয়ে গেলো।এমন যজ্ঞ এখানে কেউ এর আগে দেখেনি । কৌতুহলি চোখের তারায় তারায় বৃষ্টিভেজা কাঠখন্ডগুলো মন্ত্রবলে জ্বলছে। যজ্ঞের মন্ত্রে আগুন দাউদাউ করছে আর ভিড় বাড়ছে মানুষের । মন্ত্র আর আগুন ছড়িয়ে পড়ছে অগরুর গন্ধে নির্বান যেন এখানেই যজ্ঞকল্পের আগুনে আর মন্ত্রে ।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে।চিতার আগুন যত বাড়ছে তার স্ফুলিঙ্গ তত  ছড়াচ্ছে, উপরের  দিকে উঠতে থাকা স্ফুলিঙ্গের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে মর্ত্যের তারা উপরে চলে যাচ্ছে আর মেঘে কেটে যাওয়া ঝকঝকে আকাশে গিয়ে তারা হয়ে যাচ্ছে এক একটা। বড়দা মা কি তারা হয়ে গেলোআকাশের দিকে তাকিয়ে নির্মাল্য একরাশকান্না চেপে মাথা নাড়ালো নিহারেন্দুর কথার উত্তরে । সুভাষ ঝাপসা চোখ মুছে আকাশের দিকে তাকালো সপ্তর্ষি মন্ডল দেখতে দেখতে তার মনে হলো কুল ঠাকুরের পূজার আগেই চুরি করে নেয়া আমের সাজা এত বড় !  ঠাকুর দেবতা এত লোভী । গোটা পাঁচেক আম তাদের আগে খেয়ে ফেলেছে বলে মা কেই নিয়ে চলে গেলো।সুভাষের মনে হলো ঈশ্বর নিজেই পাপী তাই দেবতা সব পাথর আর ছবিতে। চলতে ফিরতে পারে না।তাই তার ঘরে যারা যায় তারাও পাপ মোচনেরআশায় উপসানালয় ছোটে।চিতার সজ্জা ভেঙে পড়তেই একসাথে অসংখ্য স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো। কাঁচা বাঁশ দিয়ে উঠিয়ে ধরে খড়ি ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।আগুনে পুড়তে থাকা রগে টান পড়তেই লাশ উঠে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে মনে হয় আর তখনই বাঁশ দিয়ে বাড়ি মেরে মেরে লাশ কে শুয়ে দেয়া হচ্ছে । অদ্ভুত এই দর্শন পলকে দেখে মনে হলো সুভাষের মা উঠে বসতে চাইছে।সে মরেনি । এখনই ডেকে উঠবে বড়দা নয়ত তাকে।চিতার আগুন যত কমে আসচ্ছে অন্ধকার যেন ততগাঁঢ় হয়ে নেমে আসচ্ছে । সব তারা যেন মর্ত্যের একটি তারার মৃত্যুতে স্বর্গের আকাশ ছেড়ে এই চিতার কয়লা ছাইয়ে পুড়ে যাচ্ছে।তাই একটু আগের ঝকেঝকে আকাশ আবার কাল হয়ে গেছে কোত্থাও কোন তারা নেই । অস্থি সংগ্রহ করে কলসি ভরে ভরে জল এনে চিতা ধুঁয়ে এক কোদাল মাটি এনে কলসি ভেঙ্গে পিছনে না তাকিয়ে ফিরে যাবার নিয়ম মেনে সবাই ফিরছে । বড়পুকুরের ডুব দিয়ে স্নান সেরে দত্ত বাড়ীর দিকে হাঁটতে থাকে সবাই আর আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামে..নাকি জমাট কান্না ধরিত্রীর ?

মধুবাবা বেরিয়ে গেছেন পরিক্রমায় ।  আশ্রমজুড়ে কি এক অচেনা নীরবতা ।  চ্যালাদের রেখে গেছেন। সন্ধ্যারতি,গাঁজার আসর সব সময়মাফিক চলেছে অথচ কি যেন নেই । একটি মানুষের নীরবতা এত প্রকট হতে পারে কেউ আগে কখনো ভাবেনি। ভক্তরা আসে চ্যালাদের হাত থেকে নকুলদানা নেয় কিন্তু শূন্যতা অনুমেয় । কেউ গাঁজার আসরে বসে গান ধরে সুরেই গায় অথচ মনে হয় গান যেন তালকাণা হয়ে ভাসে। গত কয়েক বর্ষার চেয়ে এবারের বর্ষা যেন অনেকটা বেশি । মধুবাবা যেদিন বের হলেন তার পরদিন থেকে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে থামার যেন কোন ইঙ্গিত নেই কোত্থাও।অনবরত ঢলে রেল ও জনজীবন অনেকটাই বিঘ্নিত।রেল বিঘ্নিত বলেই হকার,কুলি ভক্তকুলের আবাস হয়ে উঠেছে মধুবাবার ঢেড়া । সারাদিন  শূন্যতার ঘোরে গাঁজার বুঁদ নেশা উড়চ্ছে।একের পর এক ছিলিম ঘুরছে।কেউ উঠে যাচ্ছে নতুন কেউ এসে বসচ্ছে।কেউ বা নেশায় বুঁদ হয়ে কাঁদচ্ছে । কেউ হাসচ্ছে তো হাসচ্ছে । এতকিছুর পর ও মধুবাবার শূন্যতা যেন কিছুতেই উবে যাচ্ছে না । নেশায় টলতে টলতেও ঘুরে ফিরে আসচ্ছে মধুবাবার না থাকার কথা।কেউ বলে বাবা সাক্ষাত ভগবান তাই তো তিনি নেই।আকাশ কাঁদচ্ছে। ঢেড়ায় সব আছে তবু যেন প্রাণ নেই। সেদিনের যজ্ঞের কথা উঠে কেউ নেশায় কিংবা জ্ঞানে জয় মধুবাবার জয় ধ্বনি দেয় । ঠিক হয় এবার বাবা ফিরে এলে বাবার ফটোগ্রাফ তুলে রাখা হবে । সবার মনে অমোঘ এক বিশ্বাস বাসা বাঁধে বাবার ছবি যদি থাকে তবে নিউকোচবিহার ভগবান শূন্য হবে না কখনো...

ঊনত্রিশ দিন হয়ে গেলো কিরণবালা ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে গেছেন ।  দত্তবাড়ী আজো যেন সেই শোক থেকে বের হতে পারেনি।মগড়ার পাড়ে আজ কামানি । কিরণবালার চার সন্তান আজ তাদের মাথামুন্ডন করে অশৌচ থেকে শৌচের দিকে ।  আগামীকাল শ্রাদ্ধশান্তি তার প্রস্তুতির কাজে সকাল থেকেই ব্যস্ত উপেনবাবু, যোগেশবাবুরা । আমীর আলী খান পাঠান সহ আরো কেউ কেউ যেখানে খাওয়া দাওয়া হবে তার সামিয়ানা টানানোর দেখভাল করছেন ।  ডাক্তার বীরু ভট্টাচার্য  সকালে একবার ঘুরে গেছেন । মতিলাল বাবু গদিতে বসে কুল পুরোহিতের সাথে শাস্ত্র নিয়ে মেতে উঠেছেন । গদির সামনের বারান্দায় বসে আছেন কেউ কেউ । নরেন্দ্রবাবু গত কয়েকদিনের বৃষ্টি নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন । গত তিনদিনের আকাশ দেখে নরেন্দ্রবাবুর মনে হলো বৃষ্টি বুঝি ছেড়ে দিলো।কাল হয়ত রোদ থাকবে । কামানি শেষ করে মগড়ায় ডুব দিয়ে বাড়ী ফিরে এসেছে।সদ্য মাতৃস্নেহ বঞ্চিত চার পুত্রসন্তান। নির্মাল্য এসে কিরণবালার সদ্য বাঁধিয়ে আনা সুবিশাল ফটোগ্রাফর্সের  সামনে এসে দাঁড়ালো।কাঁচ দিয়ে বাঁধানো ছবিটায় একে একে সবার ছায়ায় কিরণবালার ছবিমুখ তার মৃত্যুর মতো পলকে যেন তারই ছেলেমেয়েদেরছায়ায় হারিয়ে গেলো।নির্মাল্য ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো বড় এক ছায়া ফেলে পুস্প দরজার কোণে দাঁড়িয়ে।এতদিন ধরে আটকে রাখা কান্না যেন পুস্পকে জড়িয়ে ধরে নির্মাল্যের চোখ বেয়ে গত কয়েকদিনের বৃষ্টির মতো ঝরলো । আকাশজুড়ে রোদ থাকলেও  কিরণবালার সাত ছেলেমেয়ের চোখে এখন বৃষ্টি..

উত্সব ভাঙ্গলে যে নীরবতা ও বিচ্ছিন্নতা ঘিরে থাকে উত্সবস্থলে তেমনি এক আলস্য আর সুরহারায় প্রথম শরতের সোনা রোদ আছড়ে পড়েছে মধুবার ডেড়ায়।আকাশে এখনো শিমূল তুলা মেঘে উড়ে আসেনি । ঈশান কোণে এখনো কাল মেঘের উড়াউড়ি। যদিও তোর্ষার কোলে কাশ ফুটেছে। ভোরের গায়িত্রী মন্ত্র জপতে জপতে স্নান সেরে ফেরার পথে মধুবাবার এক চ্যালার চোখে প্রথম  ধরা পড়ে কাশফুল । ফোটা কাশফুল অন্যদের দেখিয়ে তারা যখন ফিরছে তখনো তারা জানে না । অথচ  মধুবাবার জন্য আজ তাদের মন ব্যাকুল  হয়ে ওঠে । ডেয়ায় ফিরে সকালের পূজা শেষ করে আরতি ধরতেই রোদ আছড়ে পড়ে ডেরায় । অন্য এক চ্যালা তখন চা বানাতে ব্যস্ত । চুলার ধোঁয়া আর রোদ মিলেমিশে যখন চা পর্ব শেষ হলো তখন ডুরিয়ার হাটের রাস্তায় মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে । একজন ভক্ত বেতের টুকরীতে বেশ কিছু চাল,ডাল,আলু,বেগুন সহ একটাকা দক্ষিণা দিয়ে গেলো। এক চ্যালা বেশ অবাক হয়ে ভক্তজন ফিরে গেলে বাকীদের বললো দেখলে বাবার মহিমা স্নান সেরে ফেরার পথেই বলছিলে আজ যে কিছু নেই ভোগশালায় আর অমনি বাবা তার ভক্ত দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন।অন্যজন বেশ উদাস হয়ে বললো কিন্তু আজ প্রায় দুইমাস বাবার যে কোন খবর নেই । সেই যে অম্বাবুচি করতে কামাক্ষ্যা গেলেন তারপর থেকে কোথায় আছেন কি করছেন কে জানে।এমন তো আগে কখনো হয়নি। কথাটা শেষ করতে পারেননি তার সঙ্গে সঙ্গেই বাইরে থেকে ভেসে এলো 'অলক নিরঞ্জন,নমো নারায়ন' মধুবাবার মায়াবী কন্ঠস্বর।

দত্তবাড়ীর শোকস্তব্ধতা গলতে শুরু করেছে । জীবন প্রতিদিন একটু একটু করে স্বাভাবিক ছন্দ খুঁজে নিচ্ছে। কিরণবালার অভাবটা এখন যেন গদিঘর,বাড়ী ছাড়িয়ে ঘর কেন্দ্রিক হয়ে উঠছে । যতটুকু শোক এখনো রয়ে গেছে তা কিরণবালার  ছবি টানানো তার ঘরেই রয়ে গেছে,আর কিছুটা কিরণবালার মায়ের চোখে । সন্তান বা নরেনবাবুর কাছে যতটুকু আছে তা শূন্যতার আরেক নামে মনের গভীরে।পূজা আসচ্ছে । দত্তবাড়ীর কারো চোখে এবার পূজার উজ্জ্বলতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।নরেন বাবু ছেলেমেয়েদের ডেকেছিলেন তারা কেউ এবার বললো না আমার এটা চাই,ওটা লাগবে । বরং সবাই এক বাক্যে বললো আমাদের কিচ্ছু চাই না এবার।সন্তানের বুকে মা বুঝি এভাবেই জগতজননীকে ছাপিয়ে জিতে যায়! মহালয়ার ভোরে নরেনবাবু জেগে ওঠে রেডিও তে আকাশবাণী টিউন করতেই চন্ডীপাঠের মন্ত্রউচ্চারণে সুভাষ জেগে উঠার পর একে একে সবাই জেগে ওঠে । রেডিও এর ভরাট গলায় উচ্চারিত মন্ত্রজাদুতে একে একে সবাই নরেনবাবুর দরজার কাছে উপস্থিত হয় । সুভাষের মনে পড়ে এইদিনটায় এমন ভোরে তার মা সবার আগে উঠে স্নান করে ধুপধুনা দিয়ে ঘর ভরিয়ে তুলে তাদের একে একে ডেকে তুলতো এবার  মা নেই,ধূপের গন্ধ নেই কোত্থাও। মা কি সত্যিই নেই ! ঘরের দেয়ালে ঝোলানো মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে সুভাষ মনে মনে ডাকতে থাকে মা,মা গো । ছবির মানুষটা কি একটু নড়ে উঠলো নাকি সন্তানের ভ্রম !  আকাশবাণী রেডিও এর মহালয়া শেষ হতেই সবাই একে একে চলে যাচ্ছে এবার কেউ বলবে না প্রসাদটা নিয়ে যা বাবা ।  কেন না কিরণবালা নেই । নরেনবাবু বছরের যে কটা দিন নদীতে যান স্নান করতে আজ তার একদিন,তিনি স্নানের তৈয়ারী করে ছেলে তিনজন কে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন । পিতৃপুরুষকে তর্পন দিতে নদীর দিকে আর চোখে বিগত স্মৃতি কুয়াশার মতো ঝাপসা করে দিচ্ছে বারবার নরেনবাবুর চোখ মন..তার কিরণ যে আজ আর নেই ! সঙ্গীহীন,শ্রীলক্ষ্মীবিনে তার একা বেঁচে থাকা তখনই মনের কোণে ভেসে উঠে অনেক আগে পড়া রামের বিলাপ নিজের অজান্তে নীরবে ।

মধুবার ডেরায় দূর্গাপুজা উপলক্ষ্যে নয়দিন ব্যাপী  নবরাত্রি  যজ্ঞ  চলছে । যারা  গত  আষাঢ়ে  রাতে  শ্মশানের  যজ্ঞ  দেখেনি  তারা  মহালয়ার  পূন্য  প্রভাতে  শুরু  হওয়া  যজ্ঞ দেখতে  ভিড় করছেন । মধুবাবা  আগত  ভক্তজনের  উদ্দেশ্যে  প্রতিদিন  সন্ধ্যায় দূর্গার সৃষ্টি কথা বলতে বলতে আজ বাংলায় কবে হোম যজ্ঞ এলো তার ইতিহাস  হিন্দিবাংলা  মিশিয়ে  ভক্তদের  বলছেন ।  'বাংলার  বৈদ্যরাজা  আদিশূরেরর  আমলে  এক  ভয়াবহ  খরা  হয়, বৃষ্টির  দেবতাকে  তুষ্ট  করতে  তখন  হোম যজ্ঞ  করার  প্রয়োজন  হয় । এদিকে  বাংলায়  তখন  যজ্ঞের  মন্ত্র  জানা  বৈদিক  ব্রাক্ষ্মণ  নেই, তাই  কান্যকুব্জ  রাজ্যের রাজা বীরসিংহকে আদিশূর অনুরোধ করলেন

...