গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৩

৬১তম সংখ্যা ১৮ই অক্টোবর ২০১৩ ।। ৩১শে আশ্বিন ১৪২০

এই সংখ্যায় ৬টি গল্প । লিখেছেন - জয় চক্রবর্তী , তন্ময় দত্তগুপ্ত, ঝর্ণা চট্টোপাধ্যায়, অর্ধেন্দু শেখর গোস্বামী , ত্রিভুবনজিৎ মুখোপাধ্যায়  ও মাসুম বিল্লাহ ।

                           সূচীপত্রে ক্লিক করুন

জয় চক্রবর্তী

অথ বৃন্দাবন কথা

হঠাৎ বাঁশীর সুরে চমকে ওঠে রাধা । ঘরের সব কাজ ফেলে  ঝাঁপিয়ে পড়ে মোবাইলটার ওপর । বাঁশীর সুর স্তব্ধ । রাধা ঠোঁট বাঁকায় ।  ঠিক যা ভেবেছিল ! কানুর মিসড কল ! মানে যমুনা পারের ডাক । রাধা কোন রকমে আলনা থেকে চুড়িদারটা গায়ে গলাতে না গলাতেই কানুর খিলখিল হাসি । আবার চমক -  ধ্যাত ! কানুর এস এম এস ‘ওয়েটিং ফর ইউ অ্যাট কদমতলা’ । রাধা ওড়নাটা বুকের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে দ্রুত বেরোতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায় । একটা পলিপ্যাকে দুটো দু’লিটারের খালি কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতল নিতে ভোলে না । আসলে এসময়ে বৃন্দাবনে পানীয় জলের একটু ক্রাইসিস চলছে ।
কদম গাছের তলায় ঝাঁ চকচকে বাইকে আলো করে বসে আছে কানু । সঙ্গে জনা তিন চার বন্ধু বান্ধব । জিন্স – হলুদ টিশার্ট – সানগ্লাসে কানু সত্যিই অনবদ্য । ও বন্ধুদের ফ্লুট বাজিয়ে শোনাচ্ছিল । বন্ধুরাও মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে । আসলে ফ্লুট টা কানুর প্যাশন ! ওটা ও কখনও হাতছাড়া করে না । তাইতো রাধা রেকর্ড করে ওর রিংটোন করে রেখেছে । ওর হাসি করেছে মেসেজ টোন ।
দূর থেকে রাধার ক্যাট ওয়াক চোখে পড়া মাত্র কানুর সুর গেল কেটে --- ফ্যালফ্যাল করে সামনে চেয়ে রইল । বন্ধুরা সিচুয়েশন আন্দাজ করে যে যেদিকে পারল ধাঁ --- । রাধা মুচকি হেসে বাইকের পেছনে বসলো । কানুর ঘোর কাটতেই বিদ্যুৎ গতিতে যমুনার তীরে । এসময় যমুনার তীরে প্রচুর টুরিস্টের ভিড় । যমুনায় বোটিং – এর ব্যবস্থা আছে --- ঘন্টা হিসেবে । কানু ঘাড় ঘুরিয়ে হেলমেটটা খুলে জিজ্ঞাসা করলো --- “বোটিং ?” রাধা কিছু না বলে শুধু ওর ডান কাঁধে রাখা আঙ্গুলগুলো দিয়ে কানুর ডান কানটা মলে দিলো । কানু সম্মতি পেয়েই বাইক পারকিং এর দিকে এগিয়ে গেলো । ফেরার পথে রাধার আঙ্গুলগুলো আর কানুর দান কাঁধে নয় --- ওর কোমর জড়িয়ে ছিল। যমুনা থেকে কদমতলা ---এতটুকু দূরত্বকে শতেক যোজন বানিয়ে দুজনেই কেন যেন একদম চুপচাপ। “কানুটা ভারি নির্লজ্জ !” রাধার নীচের ঠোঁটটা জ্বালা করছিলো । “কানুটা ভারি হাভাতে !” সবটুকু এখনই চাই ।
রাত্রে সবাইকে খাইয়ে নিজেও দুটি মুখে দিয়ে সবে রাধা বিছানার দিকে---। কানুর খিলখিল হাসি! উফ ! আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে রাধা বিছানায়। কানুর এস এম এস ---“আমার আর্জেন্ট টান্সফার অর্ডার এসেছে ! কাল সকালেই মথুরা ব্রাঞ্চে রিপোর্ট করতে হবে, খুব ভোরে বেরিয়ে যাবো , ভাল থেকো” ।
কাল বোটিং এর সময়, অন্তরঙ্গ মুহূর্তে দুটো খালি বোতল সমেত পলিপ্যাকটা যমুনায় ভেসে গিয়েছিল । এখন ওটা ভাসতে ভাসতে কতদূর চলে গেছে কে জানে । যেহেতু খালি --- ডুববে না কোনদিন । ভাসবে অনন্তকাল -- যুগ যুগ পার হয়ে যাবে । “রাধ” ধাতু আরাধনায় বিরত হবেনা কোনদিন ।


তন্ময় দত্ত গুপ্ত

অবাক প্রজাপতি             

প্রজাপতি উড়ে এলেই চোখ খুলে যায় সায়ন্তনীর। প্রজাপতির ডানায় কেমন মেরুন রঙের পুঁথির গোল গোল দাগ।কিন্তু মানুষ কি করে প্রজাপতি হবে?মার কথাগুলো পিং পং বলের মত নাচতে থাকে।তারপর ধীরে ধীরে শান্ত হয়। সায়ন্তনী চেয়ে দেখে।কতো আগুন কতো ঝড় ঝাপটার মাঝেও প্রজাপতিরা ডানা ঝাপটায়।প্রশান্তির বৃষ্টি নামে।জীবন তো রোদ বৃষ্টির বালুকা বেলা।কখনও রোদ তো কখনও বৃষ্টি।কারও কারও ভাগ্যে আবার রোদের পরিমাণ এতোটাই বেশি যে মুখ জ্বলে যায়।সেই জ্বলন প্রবেশ করে গভীর অন্তরে।রাগি সূর্য স্পর্শ করে সায়ন্তনীর ত্বক।মিশ মিশে কালো চামড়া দিয়ে গড়িয়ে পড়ে ঘাম।ঘাম না রক্ত?কিছুই বোঝে না রকের রকবাজেরা।কেউ কেউ তো বলেই বসে---"সামনেই কালি পূজা । এবার আর কালি ঠাকুর   ক্লাবে না এনে সায়ন্তনীকেই ভাড়া করি চল একেবারে জ্যান্ত কালি চ্যানেলে চ্যানেলে বলবে  লাইভ কালি লাইভ কালির সঙ্গে কথা বিনদাস টি আর পি" কথাগুলো বুলেটের মতো ছুটে আসে। হৃৎপিণ্ডের এক ইঞ্চি দূরত্বে এসেই থমকে যায়।এক ঝাঁক প্রজাপতি প্রহরীর মতোই পাপড়ি মেলে বাই বাই বুলেট অসম্মানের বুলেট ফিরে যায় রকবাজ জেন এক্সদের কাছে মুচকি হাসে সায়ন্তনী তার কালো পুরু ঠোঁটের অদৃশ্য শব্দগুলি বলে ---"তোমাদের অসম্মান আমি গ্রহণ করলাম না । তোমাদের অসম্মান তোমাদেরই রইল" স্মৃতির পাখা মেলে প্রজাপতি

স্মৃতির শিয়রে কতো মুখ । অলকেশ,অনিন্দ্য,অরিত্র । অ-এর অনুপ্রাস । অলকেশ বলেছিল ---"যারা মেয়েদের বুক দেখে  তারা মুখ দেখতে পায় না" সেই অলকেশই আঁধারে আলিঙ্গনে সায়ন্তনীর বুকের আকৃতি বুঝেই  আঁধারেই মিলিয়েছিল কথা রাখেনি অনিন্দ্য বলেছিল ---"কালো জগতের আলো"  সেই  অনিন্দ্যও রাতের অন্ধকারেই বুঝেছিল শরীরের সরগম আর অরিত্র ! সেই আঁধারের আয়োজনে  নিপুণ আঙুলেই বুলিয়েছিল নাভির চারপাশ অঝোরে নেমেছিল বৃষ্টি বলেছিল অরিত্র ---"জানো  তো সায়ন্তনী সব কিছু পোড়ে পোড়ে না এই নাভিপদ্ম আর পোড়ে না স্মৃতি"। স্মৃতি স্মৃতি আর  স্মৃতি স্মৃতি কেন ভিড় করে ? কেনই বা সবাই রাতের অন্ধকারে আমায় শিখিয়েছিল বাৎসায়নের মূল মন্ত্র ? দিনের আলোয় কেনই বা তারা মুখ ফেরাল?পুরুষের কাছে নারী শুধুই আমিষাশী? শুধুই প্রবৃত্তির নিবৃত্তি ? নারীবাদীরা কতো আন্দোলন করে কতো কথা বলে পুরুষ থাকে পুরুষের  জায়গায় কিন্তু নারী কেন নিজেকে সাজিয়ে দেয় ভোগ্য পণ্য হিসেবে ? কেন কোলকাতা শহরের অধিকাংশ রিসেপশনিস্ট মেয়ে ? কোন্ যোগ্যতায় ? নারীবাদ তা নিয়ে কোনো কথা বলেনা   কোনো বাদ বা ইজম্ কি নিরপেক্ষ হয় ? একের পর এক প্রশ্ন । 

প্রশ্নগুলো ধীরে ধীরে বরশার ফলার মতো  এগিয়ে আসে সায়ন্তনীর কাছে মুহূর্তেই প্রজাপতিরা যাবতীয় প্রশ্নচিহ্ন পাখায় নিয়ে ছুঁড়ে দেয় আকাশের গায়ে প্রশ্নগুলো ছড়িয়ে পড়ে অঞ্চল থেকে বিশ্বে উত্তর নেই উত্তর হয়ত উত্তর কালের কব্জায় পাড়ার বাঁকা চোখ,চোখের কাজলের কালি ছুঁয়ে ফেলে বাবা মাকেও দুহাজার তেরোর আধুনিকতা ছাড়পত্র দেয় না সায়ন্তনীকেও কেউ তো আর বলে না --- "সে যে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ"। বাবার রেফারেন্সেই সায়ন্তনী পাড়ি দেয় শান্তিনিকেতন ।

বাবার অফিসের কলিগ মিঃ বোসের চেনা জানা পেইংগেস্টেই আশ্রয় নেয় সায়ন্তনী এখানকার এন জি ও-তে মাস মাইনায় কোনোরকমে চলে যায় । অন্তরঙ্গে কোনো রং না লাগলেও বহিরঙ্গের পরিবর্তন হয় কিছুটা । সায়ন্তনী নীল সালোয়ার ছেড়ে এখন হলদে শাড়ি । আম্রকুঞ্জ ছাতিম তলার শুকনো পাতারা হাওয়ায় ভাসে । ভাসতে ভাসতে ছোঁয় মাটি । তারা অদ্ভুত আকার নেয়।জড়ো হয় । সায়ন্তনী স্পষ্ট দেখতে পায় শুকনো পাতা,রাধা চূড়া,কৃষ্ণ চূড়ারা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে মিলে  তৈরী করে সম্পূর্ণ বাক্য --- "ওয়েলকাম সায়ন্তনী। তোমাকে অভিবাদন ।"সায়ন্তনী তাকিয়ে দেখে । কোলকাতার ভিটে মাটি মিত্র পাড়া তার নিজের পাড়া হয়েও মিত্র হোল না কোনোভাবেই।
অথচ এরা কি অবলীলায় তাকে কাছে ডাকে । হঠাৎ লেখাগুলো ভেঙ্গে যায় । সায়ন্তনী চোখ তোলে।দেখে ফ্যাকাশে মুখে একটা ছেলে । সায়ন্তনীর পেইংগেস্ট লাগোয়া যে বস্তি সেই বস্তির ছেলেদের একজন নাম হিল্টু । হিল্টুর সঙ্গী লালু । লালু একটা তরতাজা জ্যান্ত নেড়ির বাচ্চা।মাঝে সাঝেই পেইংগেস্টের সামনের বাগানে চলে আসে ।  হাড় ভাঙা শরীরেও লেজ নাড়ে ।

বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামে । তারপর রাত । তারারা ছড়িয়ে পড়ে আকাশ পথে । গ্রহ আর উপগ্রহের  ফারাক বুঝতে চায় সায়ন্তনী---আমি গ্রহ না উপগ্রহ ? নিজের আলো না অন্যের আলোয়  আলোকিত ? এমন সময় এস এম এস বাজে।একি! এ যে অলকেশ!---"একবার দেখা  হবে" ? ওয়েটিং ফর ইউ । সায়ন্তনী মোবাইল বিছানার পাশে রাখে । আবার এস এম এস বাজে। এবার অনিন্দ্য --- "মিসিং ইউ ডিয়ার।প্লিজ মিট মি । "টুং টাং শব্দ হয়।আবার টেক্সট  মেসেজ ---"হায় ব্ল্যাক বিউটি অ্যাম অরিত্র । ওয়ান্ট টু মিট।"মিশে মিশে কালো কিছু আঙ্গুল  ডিলিট করে একের পর এক মেসেজ । অলকেশ অনিন্দ্য অরিত্র তিনজন আলাদা হলেও আসলে প্রবল যৌনতার তিন বিন্দু । মনের মোড়কে এরা মধু খোঁজে । এস এম এস বেজেই চলে । সুইজ অফ করে সায়ন্তনী।তখনই আকাশ জুড়ে মিট মিট করে কিছু তারা।সহজেই ফারাক বোঝে সায়ন্তনী। গ্রহ আর উপগ্রহের । আলেয়া নয়,আলোয় আলোয় ভোরে ওঠে সে । অলকেশ অনিন্দ্য অরিত্র হারিয়ে যায় নিরুদ্দেশের গহ্বরে । মুখ তুলে দেখে সায়ন্তনী কাছেই দাঁড়িয়ে লালু । লালুর সেই  পরিচিত লেজ নাড়া ---"লালু তুই এতো রাতে ? আয়---" । লালু মুখ ঘষে সায়ন্তনীর বুকে । পরম যত্নে চেটে দেয় সায়ন্তনীর স্তন । সেই স্তন দিয়ে গড়িয়ে পড়ে দুধ । দুধ গড়িয়ে পড়ে লাল মেঝেতে । মেঝে থেকে দালানে । দুধের স্রোত বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে গিয়ে ঢোকে বস্তি  বাজারে । হাড় হাভাতের ব্যাটারা দুধ সাগরে ডুব দেয়। আচমকাই বেজে ওঠে সানাই সুর । লালু আর সায়ন্তনী পাশাপাশি । সেই সঙ্গে সেই মেরুন রঙের এক ঝাঁক প্রজাপতির সমাবেশ। তারা নিত বরের মতো বাসর জমায়। প্রজাপতির সংখ্যা কমতে থাকে।---"তোমরা কোথায় যাচ্ছ" ? জিজ্ঞাসা করে সায়ন্তনী। প্রজাপতির পাখা দুটো টাটা দেওয়ার ভঙ্গী কোরে বলে ওঠে --- "আমাদের যে কাজ শেষ সায়ন্তনী । তুমি তোমার মধ্যে তোমাকে ফিরে পেয়েছ" ।  কেপে ওঠে  সায়ন্তনীর অভিমানী জিভ --- "তা বোলে চলে যাবে"!--- "আমাদের যেতে হবে বন্ধু। সেবার আয়লা, এবার পিলিং---আয়লা,পিলিং,সুনামী সবই একই মুদ্রার এ পিঠ আর ও পিঠ । ওদের পাশে গেলে ওরাও খুঁজে পাবে, যেমন তুমি পেলে তোমাকে । সময় নেই । চললাম"। সারি সারি প্রজাপতি শোঁ শোঁ শব্দ করতে করতে ভোরের আলোয় মিশে যায় । মিশে যায়  শিশিরের প্রতিটি বিন্দুতে । 

ফোটা ফোটা শিশির ধুঁয়ে দেয় সায়ন্তনীর চোখ মুখ ঠোঁট। এমন কি  সমস্ত বাগানময় পেইংগেস্ট ।







ঝর্ণা চট্টোপাধ্যায়

সহকর্মী

মাঠ ভেঙ্গে একরকম ছুটেই আসছিল মিত্রা। বড় বড় পা ফেলে ফেলে আসছিল অফিস ঘরের দিকে। কালকে স্কুলের একটা মিটিং আছে। ঠিক স্টাফ রুম থেকে বেরোবার মুখে বড়দি হাতে ধরিয়ে দিলেন কাগজটা। বড়দির মুখের ওপর না বলতে পারেনি। এখন এই কাগজটা দিয়ে আসতে হবে অফিসে, বরুণবাবু কে। বরুণবাবু তাদের অনেক দিনের পুরোনো কর্মী, তাঁকেও ঠিক ডেকে পাঠানো যায় না। বয়স্ক মানুষ। অথচ, এখন না বেরোলেই নয়। দিদিমণিরা প্রায় অনেকেই বেরিয়া গেছেন। ছুটির ঘন্টা পড়েছে খানিক আগেই স্টাফরুমে বসে বসে ক্লাস এইটের ক্লাসটিচার শেফালিদির সঙ্গে পরীক্ষা নিয়ে কথা বলছিল মিত্রা হাতে সময় ছিল কিছুটা। হাত ঘড়িতে বারবার ঘড়ি দেখে ঠিক সময়েই বেরিয়েছিল, কিন্তু বড়দির  কাগজখানা দিতে গিয়েই দেরী হয়ে  যাবে মনে হচ্ছে। এখুনি না বেরোলে বাড়ি ফেরার বাস টা পাবে না মিত্রা। আর এই বাস না পেলে এখন ঝাড়া একঘন্টা বাসস্টপে বসে থাকতে হবে  পরের বাসের জন্য। খাঁ খাঁ বাসস্টপে বসে থাকতে  কারই বা ভাল লাগে !  

পড়ি কি মরি করে হাঁফাতে হাঁফাতে অফিসে এসে দ্যাখে বরুণবাবু নেই। অন্য একজন বসে আছে, আগে তাকে দেখেছে বলে মনে হল না, নতুন লোক হবেন, হয়ত বরুণ বাবুর জুনিয়র কেউ হবেন। আসলে স্কুলের দিদিমনি রা খুব একটা অফিস-ঘরে আসেন না, আসার দরকারও হয় না।  নোটিস যা দেখার থাকে ওদের স্টাফরুমেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাই সকলকে  চেনাও হয়ে ওঠে না।  তাড়াহুড়ো করে কোনরকমে বুঝিয়ে দিতে দিতে দেখল ভদ্রলোক হাঁ করে মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। কি অসভ্যতা! একজন টিচার কথা বলছেন, কিছু বোঝাচ্ছেন, আর তুমি মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছ ! মাথা গরম হয়ে গেল। একে তো দেরি, তায় আবার...  অপ্রস্তুতেও পড়ল, বিরক্তও হল মিত্রা। কাগজটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে  বাইরে বেরিয়ে এল এবার হাঁটা লাগাতেই হবে, নইলে এই বাসটা আর পাবে না।   
সিঁড়ি দিয়ে নেমে মেনগেটের কাছাকাছি আসতেই পিছন থেকে ডাক---শুনুন।  ফিরল মিত্রা। সেই ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে হাতে কাগজ নিয়ে।  মুখখানা হাসি হাসি করে জিজ্ঞেস করলেন,
---কিন্তু কি করতে হবে, কতগুলো কপি, কোথায় জমা দিতে হবে কিছুই তো বলে গেলেন না...
মুশকিলে পড়ল মিত্রা। মুখখানা কাঁচুমাচু করে হাতঘড়ি দেখল। তারপরএকটু গম্ভীর হয়ে বলল,
---এসব  কাজ তো আপনারই জানার কথা, আমার তো নয়। না পারলে বড়দিকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিন...আর দাঁড়ালো না। পরের দিনও ভোগান্তি যে  একটা আছে, সেটা  বুঝতে পারেনি মিত্রা যথারীতি স্কুলে এসে প্রথম তিনটে ক্লাস করার পর ডাক পড়ল হেডমিস্ট্রেসের ঘরে।  লাবণ্যদি মানে স্কুলে সংষ্কৃত  পড়ান যিনি, এসে বললেন---- যা, বড়দি  ডাকছেন অফিসে।
--কেন গো?  
আলমারি থেকে  খাতা , চক -ডাস্টার নিতে নিতে লাবণ্যদি মাথা নাড়লেন, জানেন না। হঠাৎই মনে পড়ল কালকের ঘটনা টা। ভয়ে ভয়ে মুখ শুকনো করে উঠে দাঁড়াল মিত্রা। শাড়ীর কুঁচি ঠিক করল, মাথার চুলে একবার হাত দিয়ে ঠিক করে নিল। পাশে বসা অদিতিকে একবার  বলল--কি ব্যাপার বলত?
অদিতি এইমাত্র বড়দির কাছ থেকেই ফিরল। আগামিকাল ছুটি নেবে, তাই দরখাস্ত জমা দিয়ে এল। ব্যাগ থেকে একটা ছোট জলের বোতল বার করে গলায় ঢালতে ঢালতে বলল,--- বড়দির ঘরে একজন নতুন ফিজিক্সের স্যার বসে আছেন দেখলাম...দ্যাখগে, হয়ত ক্লাস এরেঞ্জমেন্টের ব্যাপার হবে...গিয়েই দ্যাখনা !
মিত্রা হাতব্যাগটা একবার হাতে নিয়েও আবার বড় টেবিলে রাখল। না, ব্যাগ নিয়ে যাবে না, থাক এখানে বেরোতে গিয়েও আবার ফিরে এসে ব্যাগটা টেবিল থেকে তুলে নিয়ে হাতে ঝোলাল। অদিতি দেখে হেসে ফেলল,--তুই কি রে, ছাত্রী নাকি, এত ভয় পাচ্ছিস কেন? মিত্রাও হেসে ফেলল। ---যাই, ঘুরেই আসিবলেই স্টাফরুম থেকে বেরিয়ে গেল বড়দির অফিসের দিকে।

অফিসে ঢুকতেই দেখল বড়দি মানে সুনীতিদি সামনের দিকে মুখ করে একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলছেন। ভদ্রলোকের মুখ দেখা যাচ্ছে না, তিনি পিছন দিকে ফিরে বসে আছেন। সুনীতিদি মিত্রাকে দেখতে পেয়ে ডাকলেন---আয়, তোর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই, ইনি হলেন সুধাময়, সুধাময় সরকার। আমাদের স্কুলে গতকাল নতুন জয়েন করেছেন, ফিজিক্সের।
তারপর মিত্রার দিকে ফিরে বললেন---আর হল মিত্রা, আমাদের পুরনো  সহকর্মী, স্কুলে বায়োলজির টিচার।ভদ্রলোক মনে হয় হাসি মুখ করে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, মিত্রার মুখ দেখে আর সে সাহস না করে শুধু হাত দুটো বুকের কাছে তুলে দাঁড়ালেন সুনীতিদি দুজনকেই বসতে বলে শুরু করলেন আলোচনা। অদিতি ঠিকই বলেছিল, রুটিনের কথা, ক্লাস এরেঞ্জমেন্ট, প্র্যাক্টিকাল ক্লাস এইসব আলোচনার জন্যই ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তাহলে কালকের ব্যাপারটা কি হল! মনে মনে ভাবল মিত্রা, কিন্তু কিছু বলল না। কথা  সারতে প্রায় গোটা একটা পিরিয়ডই গেল। এই পিরিয়ডটা মিত্রার অফ ছিল। বেরিয়ে আসতে যাবে, বড়দি বললেন,---এনাকেও সঙ্গে নিয়ে যা, স্টাফরুমটা দেখিয়ে দিস।
মিত্রা বড় বড় চোখ করে অবাক হয়ে তাকাল বড়দির দিকে। ইনি কি আমাদের সঙ্গে, আমাদের স্টাফরুমে বসবেন নাকি---মনে মনে ভাবল মিত্রা। সুধাময় হয়ত বুঝতে পেরেছিলেন, বললেন---না, মানে আমি তো অফিসেই বসতে পারি!
সুনীতিদি বললেন---না, তা কেন, ওপরে তো একটা আপনাদের স্টাফরুম আছে, ফিজিক্স আর বায়োলজি রুমের মাঝে, আগে যাঁরা ছিলেন তাঁরা ওখানেই বসতেনবলে মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললেন, ---তুই ওঁদের রুমটা দেখিয়ে দে, সঙ্গে নিয়ে যা ওনাকে।
বড়দিকে নমস্কার করে মিত্রার সঙ্গে বেরিয়ে এলেন ভদ্রলোক।   

বড়দি ঠিকই বলেছেন। এর আগেও তো দুজন মাষ্টারমশাই ছিলেন এই স্কুলে, দুজনেই অন্য স্কুলে চলে গেছেন। ছেলে টিচারদের জন্য দোতলায় একটা স্টাফরুম আছেবিজয়,প্রকাশরা ওখানেই বসতেন। একদিকে ফিজিক্সের প্রাক্টিক্যাল রুম, আর অন্যদিকে বায়োলজি, এই দুয়ের মাঝখানে একটা ছোট্ট রুম আছে। দুটো আলমারি, একটা ড্রয়ার দেওয়া মাঝারি মাপের টেবিল, গোটা তিনেক চেয়ার, একটা আরাম কেদারা  আর লাগোয়া একটুকরো একটা টয়লেট। কিন্তু ইনি তো একা, সারাদিন মুখ বুজে থাকবেন  কি করে! মিত্রা ভাবল সেকথা। কিন্তু তাই বলে আমি  আমার কাজ ফেলে তোমার সঙ্গে গল্প করতে আসছি না, যতই পাশাপাশি ক্লাস হোক আমার। তাছাড়া এটা মেয়েদের স্কুল, এখানে  একটা ডিসিপ্লিন আছে, সেটা মেনে চলতে হয় সবাইকে...মনে মনে ভাবল সে।   
ওপরে উঠে এসে ঘরটা হাত বাড়িয়ে দেখাল মিত্রা। মুখ বাড়িয়ে ফিজিক্স রুমে কাজ করে যে ছেলেটি, পলাশ, তাকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দিল---পলাশ, ইনি তোমার মাষ্টারমশাই
খুশি হল পলাশ। তার হাতে সুধাময়কে সঁপে দিয়ে নীচে নেমে এল মিত্রা।

()

আর ভাল লাগছে না সুধাময়ের। প্রায় মাস হয়ে গেল এই স্কুলে। স্কুলটা খারাপ নয়। মেয়েরাও যে খুব অবাধ্য, তা নয়। মেয়েদের স্কুল যেমন হয়, এও তেমনি। কিন্তু একা একা কাঁহাতক মুখ বুজে এভাবে কাটানো যায় ! এতদিনে বুঝতে পেরেছে সুধাময়, কেন এই স্কুলে ছেলে টিচার রা বেশিদিন থাকেন না। এই একাকীত্ব অসহ্য।  যতক্ষণ ক্লাস থাকে, কেটে যায়। সুধাময় তার কাজে ফাঁকি দেয়, একথা বলতে পারবে না কেউ। মন দিয়ে ছাত্রীদের পড়াতে চেষ্টা করে সে। ক্লাস না থাকলে কিছুক্ষণ এখানে বসেই সে চলে যায় অফিস ঘরে বরুণবাবুদের কাছে কিন্তু সেখানেও অসুবিধে। বরুণবাবু বয়স্ক মানুষ, তিনি ডাকলেও অন্য যারা আছে দু/চার জন ছেলে-ছোকরা, তারা অসুবিধে বোধ করে।  মাষ্টারমশাইরা আবার এখানে কেনকাজেই একটু সময় কাটিয়ে আবার ফিরে আসে এখানেই। শুধুমাত্র, কোন মিটিং বা মেয়েদের কোন অনুষ্ঠান থাকলে দেখা হয় সকলের  সঙ্গে,  অল্পস্বল্প কথাও হয়। অন্যসময় করিডরে দেখা হলে শুধু হাসি বিনিময়। স্কুলের এই দিকটায় দোতলায় শুধু বড় দুটো প্রাক্টিক্যাল রুম আর এই স্টাফরুম অন্যদিকেও ঠিক  এমনি কেমিস্ট্রি আর জিওগ্রাফির প্রাক্টিক্যাল রুম আর একটা ছোট্ট ঘর আছে, মাঝে মাঝে দেখেছে কাউকে ক্লাস নিতে কিন্তু সেটা মনে হয় খুব একটা ব্যবহার হয় না। কিন্তু সেদিকে যাওয়ার কোন দরকার হয় না সুধাময়ের। এদিকে দেখা হবার হলে একমাত্র মিত্রার সঙ্গেই বারান্দায় সে দাঁড়ালে দু/চারটে কথা হয়। কিন্তু মিত্রা বেশিক্ষণ দাঁড়ায় না। তার খুব দুর্নামের ভয়। মনে মনে হাসে সুধাময়। সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলাতেও এত ভয়! মিত্রাকে তার ভালই লাগে। ছিপছিপে, সুশ্রী। যদিও ঠিক সুন্দরী বলা যাবে না। তাহলেও তাকে দেখতে ভালই লাগে। আরও একটি মেয়ে আছে, অদিতি, মিত্রার খুব বন্ধু সে। কখনো-সখনো  নীচে করিডোর দিয়ে যাবার সময় স্টাফরুমের দিকে তাকিয়ে দেখেছে মিত্রা আর সেই মেয়েটি অদিতি কথা বলছে। মিত্রার  একটা স্বভাব হল, দুহাতের পাতায় মুখ রেখে সে চুপ করে কথা শোনে। মিটিংয়েও দেখেছে তাকে এই ভাবে বসে থাকতে। সুধাময়ের  এই ঘরের বাঁদিকে একটা বন্ধ জানালা আছে। সেখান দিয়ে অল্প একটু ফাঁক দিয়ে মিত্রার  বায়োলজি রুমের ভিতরটা দেখা যায়। মাঝে মাঝে সে দেখেছে মিত্রা খুব মন দিয়ে ছাত্রীদের পড়াচ্ছে। কোনসময় যে ছেলেটি কাজ করে এই রুমে, তাকে সঙ্গে নিয়ে ঝাড়-পোঁছ, ফরমালিন ঢালা বোতলে বোতলে এসব করতেও দ্যাখে। অনেকসময় ছাত্রীরা পড়া বলছে আর মিত্রা দু-হাতের পাতায় মুখ রেখে চুপ করে শুনছে সেরকমও দেখেছে। বেশ লাগে তখন দেখতে। কিন্তু কি ব্যাপার, আজ এত মিত্রার কথা ভাবছে কেন সে! নিজের মনেই হেসে ফেলল সুধাময়। হাতদুটো ওপরে তুলে আড়মোড়া ভাঙল। এক কাপ চা পেলে ভাল হত,বলবে নাকি পলাশকে একবার !

ঘরের বাইরে এসে দেখল পলাশ আর বায়োলজি রুমে কাজ করে যে ছেলেটি, সুশীল, দুজনে মিলে কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছে, সুধাময়কে দেখে চুপ করে গেল। পলাশকে এককাপ চা আনতে বলে আবার নিজের জায়গায় বসল সুধাময়। মাথাটা আজ খুব ধরে আছে, শরীরটাও যেন ঠিক ভাল লাগছে না। একটা মাথা ধরার  ওষুধ কিছু আনতে দিলে ভাল হত। আরাম চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে মাথাটা হেলিয়ে দিল দিল সুধাময়।   

()

ডাকাডাকি, চ্যাঁচামেচিতে যেন ঘুম ভাঙলো সুধাময়ের। চোখ খুলে দ্যাখে সামনে অনেকের মুখ। এদিক-সেদিক তাকিয়ে দেখল মিত্রা, অদিতি, শেফালিদি, বীণাদি, আরো কেউ কেউ  এমনি কি সুনীতিদি মানে বড়দিও তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে। উনিই কথা বললেন প্রথম,
---কেমন লাগছে এখন, শরীর কি খুব খারাপ, তাহলে বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নিন।কেউ নাহয় সঙ্গে করে দিয়ে আসুক।।
অবাক চোখে তাকাল সুধাময়। কি হয়েছে, সেকি ঘুমিয়ে পড়েছিল, নাকি অজ্ঞান হয়ে গেছিল? মৃদুস্বরে সকলের দিকে তাকিয়ে বলল,
--না, মানে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, কি বলুন তো?
শেফালিদি এঁদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণা। হেসে বললেন,
--সে কি? পলাশ তো গিয়ে আমাদের ডেকে আনল। আপনাকে ডেকে ডেকে সাড়া না পেয়ে  ভয় পেয়েছিল। কি ব্যাপার বলুনতো, ঘুমিয়ে পড়েছিলেন...?
ইতস্ততঃ করল সুধাময়...না, মানে, শরীরটা...
শেফালিদি এগিয়ে এসে বললেন--জ্বর হয়নি তো... বলে কপালে হাত দিয়েই বলে উঠলেন...জ্বরই তো, গা পুড়ে যাচ্ছে, কি মুশকিল, আমাদের বলেননি কেন? আমরা নাহয় নীচে থাকি, মিত্রাকেও তো বলতে পারতেন, সে তো এখানেই বেশি থাকে...বলেন নি কেন ওকে?
--মাথাটা খুব ধরেছিল, তাই...মৃদুস্বরে বলার চেষ্টা করল সুধাময়।
মিত্রার দিকে চোখ গেল সুধাময়ের। একদৃষ্টিতে দেখছে তাকে। চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি নামিয়ে নিল। বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলল,
----কি কান্ড, বুঝতেই পারিনি...আপনারা শুধু শুধু আপনাদের ক্লাস ছেড়ে এইভাবে...খারাপ লাগছে, কোনো মানে হয় না...
সুনীতাদি ঘরের বাইরে পা রাখলেন। যাবার আগে বলে গেলেন সুধাময়ের দিকে তাকিয়ে--
---বাড়ি যেতে চাইলে যেতে পারেন। আজ আর আপনাকে ক্লাস নিতে হবে না। আর এখানে  থাকতে চাইলে নীচের স্টাফরুমে গিয়ে বসুন। আপনার ক্লাসটা করবীকে বলে দিচ্ছি, মেয়েদের ডেকে নিয়ে  ড্রিল ক্লাসে চলে যাক প্রাক্টিক্যাল ক্লাসও আজকে নিতে হবে না।

সুনীতাদি চলে গেলেন। সুধাময় বাকিদের সঙ্গে নেমে এলেন নীচের স্টাফরুমে।    শেফালিদি একটা হাত ধরে রইলেন সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়। কৃতজ্ঞতা বোধ করল সুধাময়। সহকর্মীদের সহৃদয় ব্যবহার আপ্লুত করল তাকে। আজ খানিক আগেও সে ভাবছিল অন্য স্কুলে চলে যাবার কথা। এখন মনে হল---মেয়েরাই পারে এমন করে আপন করে নিতে। এই আন্তরিকতার কি মূল্য দেবে সে? তাকে একটা আরাম চেয়ার ছেড়ে দিয়ে লাবণ্যদি উঠে দাঁড়ালেন, ক্লাস নিতে যাবেন। যারা ছিল, তাঁদের বলে গেলেন, সুধাময়ের যদি কোন দরকার হয়, দেখতে প্রয়োজনে খবর দিতে। নীচের স্টাফরুমে আরাম চেয়ারটাতে মাথা হেলিয়ে দেবার আগে আরো একবার সকলের দিকে তাকাল  কৃতজ্ঞতার চোখে। দেখল মিত্রা তার হাত দুটো জড়ো করে দুহাতের পাতায় মুখ রেখে তার দিকেই তাকিয়ে। চোখ বুজল সুধাময়।