গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ৩০ জুন, ২০১৩

ফারহানা খানম

ফিরে আসা

ঠিক সাড়ে নয়টায় নাস্তা শেষ করে জামিল সাহেব ছেলে রুপম কে নিয়ে বেরিয়ে যাবেন কলেজে ভর্তি করতে । যাবার আগে বাবা ছেলে আবার দেখে নিল সব কাগজ পত্র ঠিক আছে কি না , শিলা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় খুব আদরে ভালো কলেজেই চান্স পেয়েছে, ওর রেজাল্ট ও খুব ভালো । বড় মেয়েটাও পড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষে রাজশাহিতে । ওর দুটো ছেলে মেয়েই পড়াশুনায় খুব ভালো তাই নিয়ে মনে মনে সে খুব গর্ব অনুভব করে । ওদের বিদায় দিয়ে ও সংসারের কাজে ঝাঁপিয়ে পরে রাজ্যের কাজ পরে আছে তার ,যাহ! টেবিল মুছতে গিয়ে পরে ভেঙ্গে গেল ফুলদানিটা কি যে হোল আজ ।
এমনিতে শিলা খুব গুছানো মেয়ে সারা ঘর তকতকে চকচকে করে রাখে । ও খুব ভালোবাসে বাংলা ছবি দেখতে আর সে রকম টিপটপ থাকতে । যদিও জামিল সাহেব একটু বেশী রাগী মানুষ তবে তাঁর কড়া শাসন সন্তানদের ওপর । শিলার অনেক কিছুই তিনি পছন্দ করেন না আবার শিলাকে ছেড়ে থাকতেও পারেন না । ওকে ছাড়া কোনদিন খেয়েছেন এমন নজির খুব কম নিতান্তই কোন অতিথি এলে আগে খেয়ে নিলেও শিলা খেল কি না নিশ্চিন্ত হয়ে নেন তিনি । এমন মানুষ যদি একটু আধটু রাগও করেন তাতে কি এসে যায় ? শিশুর মতো সরল একজন মানুষ তিনি । 

শিলা খুব ভালবাসে গুনগুন করে গান করা , সাজগোজ করা যা কিনা জামিল সাহেব খুব একটা পছন্দ করেন না তবুও শিলা সাজে জামিল সাহেবের জন্যই, সেজে অপেক্ষা করেসে সাধাসিধে মেয়ে তার ধারনা স্বামীর সেবা করা আর তিনি যা বলবেন তা মেনে চলাই তার কর্তব্য ,তা যদি ভুলও হয় হোক । আজও সে যাবার মুহূর্তে জামিল সাহেবের ব্যাগ এনে দিয়েছে , হাসিমুখে বিদায় দিয়েছে ওদের তবে তিনি তাঁর এই বিশ্বাসের অমর্যাদা করেন নি কোনদিন ।

শিলা রান্না শেষ করে ,ঘর পরিষ্কারে ব্যাস্ত বারান্দার টবের গাছে পানি দিতে এল কেমন হু হু করে উঠলো এই ঠা ঠা রোদ্দুর মনের ভেতর কেমন কান্নার বান ডাকছে । একটা কাক কর্কশ কণ্ঠে কা কা করে উড়ে গেল চোক তুলে তাকাল ও ,ধুর! কুসংস্কার এসবে বিশ্বাস নেই শিলার । আজ মনটা কেমন কু ডাক ডাকছে যেন । ও ভাবল একবার ফোন করে খবর নেয়া গেলে হতো , কিন্তু ওর কোন মোবাইল নেই জামিল সাহেব পছন্দ করেন না তাই ওর ভাই শহিদ একটা মোবাইল দিয়েছিল সেটা ব্যাবহার করা হয়নি ,মেয়েকে দিয়ে দিয়েছে মেয়ে রাজশাহী যাবার সময় । ফোন করতে হলে যেতে হবে দোকানে , এটাও অসম্ভব যদি এসময় ওরা ফিরে আসে আর জামিল সাহেব দেখেন এই ভর দুপুরে ও বের হয়েছে তাহলেই হয়েছে ,অগত্যা সে কাজে মন দেয়ার চেষ্টা করে ।

শহীদ ছাত্রকে ছুটি দিয়ে মাত্র উঠলো জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখল কি ভীষণ রোদ ভাবল , একটা ছাতা থাকলে ভাল হতো এ কথা ভাবতেই তার খুব তৃষ্ণা পেয়ে গেল, সে এক গ্লাস পানি আনতে বলল অপুকে , কিন্ত পানি নিয়ে আসলেন ছাত্রের মা ,তিনি বললেন তোমার ওপর অনেক ধকল যাচ্ছে বুঝি বাবা তবু জানইত ছেলেটা আমার খুব অমনোযোগী আর দুষ্টু তোমার কাছেই যা একটু পড়ে । খেয়াল রেখো । আর একটু বস একটু ততকারি দিই নিয়ে যাও মেসে বুয়া কি রাঁধে না রাঁধে কি খাও কে জানে ।

শহিদ বসে খবরের কাগজটা দেখতে থাকেএই মহিলা তাকে সময় অসময় খুব সাহায্য করেন । স্নেহ করেন আর রুপমকে সে পড়ায় আরও তিন বছর আগে থেকে এখন ছেলেটা এইটে পড়ে সময়টা সত্যি ই গুরুত্বপূর্ণ ওর প্রতি শহিদের খুব মনোযোগ সেই ছোটবেলা থেকে এই পর্যন্ত সেইত পড়াচ্ছে তাইতো সে ১০ টায় এসে ১২ টায় যাচ্ছে । বসতে বসতেই মোবাইল বেজে উঠে , অপরিচিত কণ্ঠ বলে
আমি এস আই হাবিব বলছি এই নাম্বার থেকে সবশেষ কলটা আপনাকে করা হয়েছিল তাই আপনাকে ফোন করলাম, আপনি জামিল সাহেবের কে হন? শহিদের বুকটা ধক করে ওঠে কি হয়েছে ? পুলিশ কেন ফোন করবে জামিল সাহেবের সাথে কি সম্পর্ক জানার জন্য ? ও পাল্টা প্রশ্ন করে
কি ব্যাপার? ওপাশ থেকে বলে আপনি ঢাকা মেডিক্যাল ইমারজেন্সিতে আসুন জামিল সাহেব এক্সিডেন্ট করেছেন । তাড়াতাড়ি আসুন অবস্থা ভালো নয় শহিদ উঠে দাড়ায় অপুকে বলে , আসি আমি আণ্টিকে বোল জরুরী ফোন এসেছিল ।

শহীদ যখন হাসপাতালে পৌছুলো বেলা একটা , এক বেডে রুপম শুয়ে আছে , আর জামিল ভাই আই সি ইউ তে জ্ঞ্যন নেই। রুপম কথা বলতে পারছে না চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে ওর তেমন কিছু হয়নি একটু আধটু কেটে গেছে কিন্তু ভীষণ ভয় পেয়েছে সে , যা জানা গেল কলেজ থেকে বেরিয়ে ওরা মহাখালী ওভার ব্রিজটা পার হচ্ছিলো এমন সময় জোরে একটা মোটরবাইক ছুটে আসে ধাক্কা দেয় জামিল সাহেব কে হাতে ধরা ছিল রুপম ও ছিটকে যায় কিন্তু বাবা একদম উল্টে গিয়ে পড়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান ঘাড়টা কেমন দুমড়ে গেছে দেখে সেও  জ্ঞ্যন হারায় । পুলিশ জানালো সেই মোটর সাইকেল আরোহী ও হাসপাতালেই ভর্তি আছেন । উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিয়ে দেয়া যাবে এখন কেস করতে হবে ।পুলিশ বাদী হয়ে কেস করবে পরের কাজ সব ওদের ।ক্ষতি পুরন পেতে কিছু খরচ খরচা করতে হবে তাদের শহিদের মাথা কাজ করছেনা এখন সে বলল , যা হয় হবে আপনারা কেস করুন আগে । ওদিকে ডাঃ সাহেব জানালেন এখনি এবি পজেটিভ রক্ত লাগবে ২ ব্যাগ , শহিদের মনে পড়ে আপাকে খবর দিতে হবে , সে আগে জামিল সাহেবের ছোট ভাইকে ফোন করে আসতে বলে তারপর তার কিছু বন্ধুকে ফোন করে ,রক্তের ব্যাবস্থা করে , রুপমের চাচু মানে জাহিদ আসে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে , তাকে রেখে সে যায় আপাকে খবর দিতে ।রাস্তায় নামতেই

ফোন করে রিমি ধরেই বলে  তুমি এত ব্যস্ত সারাদিন আমার কোন খবর নিলে না? ওর কণ্ঠে অভিমান আর উদ্বিগ্নতা । খুব ভাললাগে ওর এই উদ্বেগটুকু । শহিদ ওকে সব বুঝিয়ে বলে ফোন ছেড়ে দেয় ।  ওর চোখের সামনে ভেসে ওঠে জামিল সাহেবের নিথর দেহটা ক্ষীণ প্রাণের স্পন্দন আছে ডাক্তাররা চেষ্টা করছেন আপ্রাণ । তাকে কৃত্রিম শ্বাস যন্ত্র দিয়ে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে তার মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে  মাথায় খুব আঘাত পেয়েছেন ।

সে যখন রুপমদের বাসায় পৌঁছায় তখন তিনটা বেজে গেছে ,শিলা খুব অস্থির হয়ে পায়চারী করছে আর আল্লাহকে ডাকছে টেবিলে খাবার সাজানো ওরা এলে খাবে ,শহিদ কে দেখে খুব অবাক হয় দৌড়ে আসে । শহিদ ওর দিকে তাকিয়ে চুপ করে সোফায় বসে পড়ে শিলা উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করে কি রে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন কি হয়েছে তোর ? ওদিকে দেখ তোর জামিল ভাই সেই কোন সকালে রুপম কে কলেজে ভর্তি করতে নিয়ে গেল এখনো এল না আমার কেমন যেন চিন্তা হচ্ছে ,মনের ভেতর শুধু কু ডাক ডাকছে রে শহিদ কি করে বলবে কথাটা তা ভাবছিল অথচ মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল তোর মনে আছে আপা বাবা যে বলেন, আপন জনের কিছু হলে মন আগে থেকেই সব জানতে পারে? শিলা চোখ বড় বড় করে বলে ওঠে মনে আছে রে কেন যেন মনে হচ্ছে কিছু হয়েছে ওদেরশহিদ এক গ্লাস পানি খায় তারপর কোন ভূমিকা না করেই বলে, তুই শান্ত হয়ে খেয়ে কাপড় বদলে আয় আপা, হাসপাতালে যেতে হবে , ঠিকই বুঝেছিস ওরা অ্যাকসিডেন্ট করেছে চল , কিছু টাকা নিশ সাথে 
- কি ? তুই এতক্ষণ বলিস নি কেন ? ওরা কি খুব বেশি ব্যথা পেয়েছে ? তুই খেয়ে নে আমি খাব না ।
- না আপা আমার কিছু খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না , চল তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখবি ... ওরা বেড়িয়ে পড়ে টেবিলে খাবার তেমনিই পড়ে থাকে ।

ওরা হাসপাতালে পৌঁছায় বিকেলে তখনো জ্ঞান ফেরেনি জামিল সাহেবের । ডিউটি ডাক্তার জানালেন অবস্থা গুরুতর । জ্ঞান আজো ফিরতে পারে একমাস ও লাগতে পারে , ওরা দুজন দুজনের দিকে তাকায় । একটু পরে বড় ডাক্তার আসেন অনেকগুলো পরীক্ষা করতে হবে বলে জানান, আরও বলেন একটু উন্নতি হলে অপারেশন করবেন , মাথার ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধে আছে । জাহিদ এসে বলে ভাবী বাড়িতে বাবা মা কে খবর দিই, শিলা বলে দাওএকটু পর ওরা রুপমকে ছেড়ে দেয় , জাহিদ বলে ভাবী এখানে থেকে ত কোন লাভ হবে না তুমি রুপম কে নিয়ে বাসায় যাও শিলা বলে না আমি থাকি তোমারা যাও শহিদ বলে থেকে কি করবি আপা ? ভেতরে ত যেতে দেবে না ,আমরা আছি কিছু লাগলে এনে দিতে পারবো , তুই যা শিলা বাসায় আসে , রুপম কে খাইয়ে রেখে দোকানে যাবে রুমানা কে জানাতে হবে ওর বাবার কথা ।

রুমানা ক্লাস শেষ করে হলে ফিরছে আর মনে মনে ভাবছে অপুর কথা এমন উদাসী দুপুরে মন টা কি ভীষণ উদাস হয়ে থাকে , কাল অপুর সাথে বেড়াতে যাবে অনেকদিন ক্যাম্পাস এর বাইরে যাওয়া হয়নি ক্লাস আর হল কেমন বন্দি বন্দি লাগছে একঘেয়েমি এই জিবনে , এসময় মোবাইল বেজে ওঠে আম্মুর ফোন হ্যালো বলেই নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে, সব শুনে সে বলে, ---- কি বলছ এসব আম্মু ?আমি আজ রাতেই বাসে উঠবো ।শিলা বলে “না তুই একা , রাতে আসার দরকার নেই সকালে আসিস” ... ফোন রেখে দেয় শিলা ।  বাসায় এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এমন কেন হোল ,কেমন একটা অনিশ্চয়তার ভয় কাজ করে অবচেতন মনে , যদি জামিল সাহেবের কিছু হয়ে যায় এই সংসার এই ছেলে মেয়ে আর তার কি হবে ? ...পরক্ষনেই এসব অলুক্ষুনে চিন্তা ঝেড়ে ফেলে মন থেকে কিন্তু চোখের পানি যে বাঁধ মানে না ।
খবর শুনে আসেন পাড়া প্রতিবেশী খবর নেন আর পাশের বাসার ভাবী ওকে জোর করে ভাত খাওয়ায় রুবেল সাহেব বলে যান ভাবী রাতে একা বাইরে যাবেন না ফোন এলে আমাদের বলবেন,নিয়ে যাবো ।


শিলা মনে মনে বলে ফোন আসবে কি আমার ত কোন মোবাইল ই নেই , এসময় রুপম বলে চাচু আপনার মোবাইলটা একটু দেবেন ? ছোট মামাকে ফোন করে বাবার খবর নেবো , আমাদের বাসায় কোন মোবাইল নেই । রুবেল সাহেব বলেন নাও বাবা ফোন কর আমরাও খবরটা শুনে যাই আর তোমার মামা কে বল কোন দরকারে যেন এই নাম্বারেই খবর দেয় । একটু পর ভাবী এসে একটা মোবাইল দিয়ে যায় বলে'' ভাবী এটা বাড়িতে ছিল ভালই আছে সিম ও দিয়েছি যতদিন দরকার হয় আপনি ব্যবহার করুন '' মানুষ এত ভালও হয়, ভাবে শিলা ।
রুমানা অপুকে মেসেজ দেয় '' আমি কাল ঢাকা যাচ্ছি বাবার অসুখ '' , বিকেলেই অনিক আসে সব শুনে বলে বেশ আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবো । তৈরি থেক সকালে টিকিট করে সময় জানিয়ে দেব ।

রুমানা বলে না তোমার সময় নষ্ট হবে ক্লাস নষ্ট হবে তার ওপর যাওয়া আসার কষ্ট খরচের কথাটা সে বলে না সঙ্কোচে , অপু বলে সে আমি বুঝবো । তুমি এত ভেবনা ।তারপর ওরা বাগানে হাঁটতে থাকে । কথা বলে অনিক রুমানাকে একটু শান্ত রাখার চেষ্টা করে কিন্তু রুমানার মনটা খুব বিক্ষিপ্ত আজ বার বার বাবার কথা মনে পড়ছে কে জানে কেমন আছে এখন ? সবাই সত্যি টা এড়িয়ে যাচ্ছে না তো ?
গভীর রাতে রুপম ঘুমিয়ে পড়ে শিলার ঘুম আসেনা বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে , সে ভাবতে থাকে কি হবে এখন ? জামিল সাহেবের যদি জ্ঞ্যান না ফেরে অনেক দিন তাহলে ... কতদিন সে হাসপাতালের খরচ বহন করতে পারবে ? সরকারী চাকুরী করেন জামিল সাহেব জমা বলতে তেমন কিছু ত নেই ...আর এখন তার হাতেও খুব বেশি টাকা নেই সংসারের টাকা ত জামিল সাহেবের কাছেই থাকে যা লাগতো তিনিই কিনে এনে দিতেন আর তার হাতে সামান্য কিছু দিয়ে রাখতেন ।তার মাথা কাজ করেনা একবার নামাজে বসে আবার উঠে চিন্তা করে এর মধ্যে কয়েকবার খোঁজ নিয়েছে না এখনো জ্ঞান ফেরেনি ওরা আই সি ইউ এর বারান্দায় অপেক্ষা করছে । সকালে ছুটে যায় সে হাসপাতালে না তেমনই আছেন তিনি জ্ঞান ফেরেনি । ফিরবে কিনা তাও জানা নেই, দুপুরে আসে রুমানা । এখন সকাল বিকাল হাসপাতালে নিয়মিত ওদের যাওয়া আসা অথচ কোন ভালো খবর নেই।  এভাবেই কেটে যায় দিন পনেরো । গ্রাম থেকে শিলার শ্বশুর শাশুড়ি আসেন ননদ আসে তার বাবা মা ও আসে ভাই ভাবী আসে এতোগুলো মানুষের রান্না করা তারপর তাদের খাবার যোগানো হাসপাতালের খরচ সব মিলে শিলার চিন্তা বাড়তে থাকে কি করবে ও ? বড় ভাই বাবা যা পেরেছেন দিয়েছেন । গতকাল সন্ধ্যায় জ্ঞান ফিরেছে জামিল সাহেবের তবে তিনি কথা বলতে পারেন না কাওকে চিনতেও পারেন না একপাশ অবশ হয়ে গেছে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন সবাইকে ।
এসময় ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নেন মাথার অপারেশন করবেন জমাট রক্তগুলো সরিয়ে দিলে উনি হয়ত ভালো হোয়ে উঠবেন । , এই অপারেশন এ টাকা লাগবে ২লাখ । শিলা ভাবতে থাকে কি কোরে যোগার হবে টাকা ? অবশেষে যোগার হয় টাকাটা অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে শিলার বাবা কিছু জমি বিক্রি করে টাকা দেন তার শ্বশুর ও দেন কিছু টাকা ও বাড়ির অনেকেই ওকে অপয়া বলতে থাকে । ও চুপ করে দিন গুনতে থাকে।

অপারেশন এর দিন ডাক্তার ওকে আর রুমানাকে ডেকে নেয় শহিদ ও যায় ওদের সাথে ,তিনি বলেন অপারেশন সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম , আর হলেও তিনি আগের মতো ভালো হবেন না , তারপরেও তারা ডাক্তার এভাবে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিতে পারেন না তাই রিস্ক নিচ্ছেন তাঁরা , এখন শিলা চাইলে অপারেশন হবে , শিলা মেয়ের দিকে তাকায় তারপর বলে হ্যাঁ আমরা চাই উনি ভালো হয়ে উঠুক , ডাক্তার বন্ডের দলিল টা এগিয়ে দেয় বলে সই করুন এক্ষুনি অনাকে ওটি তে নিয়ে যাব , শিলা সই করে তারপর ওরা জামিল সাহেব কে দেখতে যায় ,কেমন শিশুর মত তাকিয়ে আছেন তিনি ...শিলা হাতটা ধরে অস্ফুটে বলে তুমি ভালো হয়ে যাবে ভেবনা ভয় পেওনা রুমানা ভাবতে থাকে কি হবে এখন ? বাবা যদি আগের মতো সুস্থ না হয় ? বড় হিসেবে ওকেই সংসারের দায়িত্ব নিতে হবে পড়াশুনা সে চালিয়ে যাবে সাথে টিউশুনি অথাবা পার্টটাইম একটা চাকুরী ..ভাবতে ভাবতে মায়ের দিকে তাকায় বড় অসহায় সে মুখটা আর কষ্টের স্পষ্ট ছাপ ।  জামিল সাহেব কে যখন ওটি তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তিনি তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তার চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে আত্মীয় স্বজন সবাই উদ্বিগ্ন তিনি কি নিশ্চন্তে ঘুমুচ্ছেন কে জানে এ ঘুম কোনদিন ভাঙবে কি না । ওরা অপেক্ষা করতে থাকে একটা ভালো খবরের জন্য ।