গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।
বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১২
সপ্তাশ্ব ভৌমিকের দুটি গল্প
আমি পর্ণার প্রাইভেট টিউটর। পড়াতে যাওয়ার ক’দিন থেকেই ওর হাবভাব একটু কেমন মনে হত। এক
কোটিপতি ব্যবসায়ীর সঙ্গে ওর বিয়ে ঠিক হওয়ার হঠাৎ এসে বলল “আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাও।” আমি তো হতভম্ব। কোটিপতি ব্যবসায়ী ছেড়ে
স্কুলের টিচার। ওর বাবা আমাকে গুম করে দেবে। ওকে অনেক বোঝালাম। ও তবু অবুঝ। আমার
মধ্যে ও কী পেল। অল্প বয়সের পাগলামো ? আমি এতদিন ধরে ওকে পড়িয়েছি, কিন্তু কোনোদিন ওকে ভালো করে দেখিনি। হয়তো
ওদের প্রাসাদের মতো বাড়ির করিডর দিয়ে ঢুকতেই কোনো হীনমন্যতার বোধ এসে দেখার চোখ
অন্ধ করে দিত। আজ যেন ওকে নতুন করে দেখলাম। এত স্নিগ্ধ, এত সুন্দর! ও তো অ্যাডাল্ট। বিয়ে করে নেব।
পরক্ষণেই রিজয়ানুরের মৃত মুখ মনে পড়ল। ওর স্নিগ্ধ রূপের আড়ালে এমন তীব্র জেদ
লুকিয়ে থাকতে পারে সেটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। ও স্পষ্ট জানাল আমার থেকে দুদিনের
মধ্যে কোনো রেসপন্স না পেলে সুইসাইড করবে। আমি ওর কথাকে গুরুত্ব দিইনি। জানি এ-সব
প্রাচুর্যের পাগলামো। আমাকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার খেলা। কিন্তু তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় ওর
বাড়ির সামনে বিরাট ভিড় দেখে ঘাবড়ে গেলাম। বুকের ভেতর কেমন হিমেল স্রোত। কাছে যেতেও
ভয় করছে। একজন পথ-চলতি মানুষের থেকে জানলাম সন্ধ্যাদীপ থেকে নাকি ওর গায়ে আগুন
লেগেছে। পর্ণা মরেনি। ওর পিঠ, গলা, মুখের
অনেকটা পুড়ে গেছে। সেই বিয়ে আর হয়নি। হঠা মনে হল পর্ণার মুখটা যেভাবে পুড়েছে,
কেউ ওকে চট করে বিয়ে
করবে না। এখন ওর বাবা আমার মতো পাত্র পেলে রাজি হয়ে যাবে। ভাবতেই আমার শরীর থেকে
সমস্ত লুকোনো গ্লানি দূর হয়ে গেল। মনে হল যেন স্নান সেরে উঠলাম। আবেগ, উত্তেজনায় ফুটতে ফুটতে আমি দ্রুত পর্ণার
বাড়ি পৌঁছে গেলাম। বিয়ের প্রস্তাব শুনে পর্ণা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর খুব
স্পষ্ট করে বলল, “আমি কোনো
ভীতু ছেলেকে বিয়ে করবনা।”
একলব্য
প্রদীপ দাশগুপ্ত বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছড়াকার। তাঁর প্রতিটি ছড়ার বই-এর একাধিক সংস্করণ বেরিয়েছে। কিন্তু তিনি অধিক গর্বিত, মুখে মুখে ছড়া তৈরির সহজাত ক্ষমতার জন্য। এ কারণে পরিচিত মহলে ও বিভিন্ন ছড়ার আসরে তিনি আলাদা মর্যাদা পেয়ে এসেছেন। দর্শকদের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর তিনি ছড়ার মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। মন্ত্রীর অনুরোধে কলকাতা ছেড়ে উত্তরবঙ্গের এক গ্রামে যেতে হচ্ছে।সরকারি উদ্যোগে তিস্তা-গঙ্গা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে তিনি বিশেষ অতিথি। গ্রামের মানুষকে ছড়া শুনিয়ে তাঁর কিছুই এগোবে না। থাকা খাওয়ার কী ব্যবস্থা হবে কে জানে? এমনিতেই তিনি সারা বছর পেটের রোগে ভোগেন। কিন্তু গত দু-বছর সরকারি পুরস্কার কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। সুতরাং এ বছর মন্ত্রীর গুড-বুকে থাকার সুযোগ নষ্ট করা উচিৎ নয় ।
আয়োজনের কোনো ত্রুটি নেই। জলপাইগুড়ির সবথেকে ভালো
হোটেলে থাকা খাওয়ার চমৎকার ব্যবস্থা। তাকে অনুষ্ঠান মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার জন্য
স্করপিয়ো প্রস্তুত। এমন আদরযত্ন শহর কলকাতায় কল্পনাও করা যায় না। হোটেল থেকে
প্রসন্ননগর গ্রাম মাত্র ত্রিশ মিনিটের পথ। তিনি মঞ্চে উঠে অভিভূত হয়ে যান। অজস্র
স্রোতা। প্রতিটি ছড়া পাঠের পর প্রবল করতালি। এর পরেই শুরু হল বহু প্রতীক্ষিত
প্রশ্নোত্তর পর্ব। কিন্তু প্রশ্ন করার জন্য কোনো দর্শকই এগিয়ে এলো না। এ ওর মুখের
দিকে তাকিয়ে থাকে। কেউ কোনো প্রশ্ন করে না। দর্শকদের মধ্যে একজন বললেন রিকশাচালক
জংলু ভাই-কে ধরে আনা হোক। যা কিছু প্রশ্ন ওই করবে। জংলু ভাই কিছুটা দূরে রিকশার
সিটে বসে ছিলেন। তাঁর কোনো প্রতিরোধ কাজ করল না। তাঁকে পাঁজা কোল করে মঞ্চে তুলে
আনা হল। ছড়াকার প্রদীপ দাশগুপ্ত অবাক। এত লোক থাকতে শেষে রিকশাওয়ালা । নিমেষের মধ্যেই তাঁর
ভুল ভাঙল । প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে উঠে জংলু ভাই একের পর এক
প্রশ্ন শুরু করলেন। প্রতিটি প্রশ্ন ছন্দবদ্ধ। মাত্রার কোনো ভুল নেই। ছড়াকার প্রদীপ
দাশগুপ্তের জীবন, শহর,
লেখালেখি, নিয়ে কথ্য ভাষায় অনর্গল প্রশ্নবাণ ছুটে
আসছে। লেখক এমন পরিস্থিতিতে কখনও পড়েননি। তার নিজস্ব ছন্দ কেমন তালগোল পাকিয়ে
যাচ্ছে। দর্শকদের উৎসাহ বেড়েই চলেছে। এও যেন এক প্রতিযোগিতা । তিনি বুঝলেন এই একলব্যের সঙ্গে এঁটে ওঠা
অসম্ভব। প্রশ্নোত্তর পর্বকে সংক্ষিপ্ত করে হঠাৎ তিনি অনুষ্ঠান শেষ করলেন। তারপর
জংলু ভাইকে জড়িয়ে ধরলেন । গাড়িতে ওঠার আগে গ্রামের কিছু মাতব্বর
গোছের মানুষ শহরের ছড়াকারকে ঘিরে ধরলেন। তাদের বক্তব্য হল – নিরক্ষর রিকশাওয়ালা জংলু ভাই সমস্ত কথাই
নাকি ছন্দে বলে। বিগত দশ বছর কেউ ওকে ছন্দ ছাড়া কথা বলতে দেখেনি। লেখক যদি জংলু
ভাই-কে টিভি-তে কোনো অনুষ্ঠানের সুযোগ করে দেন তা হলে গ্রামের মান বাড়ে।
সকলকে যথাসাধ্য
প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিয়ে প্রদীপ দাশগুপ্ত হোটেলে ফিরে এলেন।
এমন সময় বউ-এর ফোন এলো, - “ তোমার অনুষ্ঠান কেমন হল” ? প্রখ্যাত ছড়াকার
রাগত স্বরে বললেন। “ অসভ্য
ছোটলোকের জায়গা, রিকশাওয়ালাকেও
মঞ্চে তুলে দেয়।’
বিজয় কুমার দাস
সরে যাওয়া ওড়নাটা টেনে ঠিক করে নেয় ঝিমলি। তার দৃষ্টি এখন সামনের উত্তুঙ্গ
ল্যাম্পপোষ্টটার দিকে। কি রকম মাথা উঁচু করে
দাঁড়িয়ে আছে। দেখে হিংসে হয়। এক ঝলক দমকা হাওয়ায় এলোকেশ উড়ে এসে দৃষ্টিপথ
ছেয়ে ফেলে।
রাত্রে খাওয়ার পর একটু
শুয়ে ঘুমোতে চেয়েছিল সে। শরীরটা ভাল যাচ্ছেনা ক’দিন। একটা বিষণ্ণতার অবসাদ তাকে গ্রাস করছিল। একটু আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে
গেল। এক টুকরো
ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘে শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদটা লুকোচুরি খেলছে। সে এসে দাঁড়িয়ে ছিল দক্ষিণ খোলা এই ঝোলা বারান্দায়। বারান্দার পর্দাগুলো শিহরিত হচ্ছিল বাতাসের চুম্বনে,
ঠিক যে রকম ভাবে সে শিহরিত হয়েছিল অমিতের প্রথম আলিঙ্গনে
এবং জীবনে প্রথম পুরুষের উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শে। ভাবতে অবাক লাগে ঝিমলির, কি মধুর দিনগুলোই না ছিল। একসাথে স্কুল এ যাওয়া – একসাথে মেলায় ফুচকা খাওয়া – একসাথে সিনেমা হলে রূপালী
পর্দার নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে নিজেদের হারিয়ে যাওয়া – একসঙ্গে স্কুলের শতবার্ষিকী
অনুষ্ঠানে গান গাওয়া। কি যেন একটা গান ছিল সেটা --রবিঠাকুরের “সেদিন দু’জনে ............” , তাই হবে বোধহয়। ঠোঁটের
কোণে একটুকরো হাসি ঝিলিক দেয়, চোখের কোণে একবিন্দু জল। কথা দিয়েছিল দু’জন দু’জনকে এই ভালবাসার বন্ধন অটুট রাখার -- শেষ রক্ষা হয়নি। তবে এটা
ভাবলে বোধহয় ভুল হবে, তবে কেন এখনো স্মৃতিপটে দোলা দেয় সেইসব স্বপ্নময় স্মৃতি। সেইদিনের কথাটাই
ধরা যাক না, যেদিন তাকে খ্যাপানোর জন্য অমিত ও মিতালী
প্রেমের অভিনয় করে জড়িয়ে ধরেছিল পরস্পর পরস্পরকে। সেদিন সে তার অমিতকে কি
অপমানটাই না করেছিল – ভাবলে অবাক লাগে। শুধু কি অপমান? সেই বিখ্যাত চড়টার কথা অমিত মাঝে মাঝেই মনে করিয়ে দিয়ে ভালবাসার গভীরতার
আনন্দ অন্বেষণ করত। এখন ভাবলে লজ্জা বোধ করে ঝিমলি। অন্য মেয়ের সঙ্গে একান্তে কথা বললে কি হিংসেটাই না হত রিমঝিমের। এমনটা
হওয়ারই কথা। তাদের সম্পর্ক নিছকই মানসিক ছিল না – শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়িয়েছিল। অবশেষে নিজের মতকে উপেক্ষা করে বাবার
পছন্দ করা ব্যবসায়ী পাত্র বিপুলের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। কিন্তু সম্পর্ক টেকেনি।
মাত্র তিনটে মাস।
বাড়ির অবস্থাও ভাল ছিল
না। মা মরা মেয়ের নিম্নমধ্যবিত্ত বাবাই ছিল একমাত্র স্বহায়। কিন্তু মেয়ের
ভালমন্দ বুঝতে শেখেনি একগুঁয়ে সেকেলে জেদি বাপটা। মেয়ের বিয়ের এক মাসও হয়নি
বাপটা গেল হার্ট-অ্যাটাকে। বাড়িটাও ছিল বন্ধকী। তাই সহায়-সম্বলহীন মেয়েটা কালের স্রোতে পা বাড়িয়ে পিছলে পড়ল জটিল
ঘূর্ণাবর্তে।
এই যে কোঠাবাড়িটা তার
আশ্রয়, এটাতে সে মাথা গোঁজার ঠাঁই পায় লাইনের মেয়ে
রুমকির সৌজন্যে। দু’জন দু’জনকে চিনত না। প্রথম
পরিচয় যখন উদ্ভ্রান্ত দিশেহারা রিমঝিম পুরুষের লালসার শিকার হয় একটি ট্রেনের
কামরায়। বিপুলের সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর সে চেয়েছিল চেনা গণ্ডীর
বাইরে কোথাও কোন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে মাথা উঁচু করে বাঁচতে। একবার ভেবেছিল
অমিতের কথা। পরে অবশ্য নিজের বিবেকের কাছে আশঙ্কা ছিল –
সেও যদি ফিরিয়ে দেয় ! তাই অপমানিত হওয়ার কোন
মানেই খুঁজে পয়নি সে। ট্রেনের কামরায় অচৈতন্য রিমঝিমকে রুমকি নিয়ে যায় তার
কোঠাবাড়িতে। সেবা-শুশ্রূষা করে,
অবশ্যই নিজের স্বার্থে। রিমঝিম পরিণত হয় গণিকা ঝিমলিতে। এখন তার কামরায় নিত্য অগুনতি পুরুষের আনাগোনা। তারা আসে,
পছন্দ করে, কিনে নেয় তারপর দেহটাকে
তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে। ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই তাদের কাছে। তারা শুধু
মেটাতে চায় যৌনক্ষুধা। মাঝে মাঝে মনে পড়ে অমিতের কথা। প্রথম প্রেমের অভিজ্ঞতাটা
বোধ হয় এমনই হয়।
হঠাৎ দরজায় আঘাতের শব্দে
সম্বিৎ ফিরে পায় ঝিমলি। দরজার দিকে রওনা হয় শম্বুক
গতিতে। স্মৃতিগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সে। বাইরে
রুমকির কণ্ঠ্যস্বর – “এই পোড়ারমুখী, এক নাগর এয়েছে লো, তোর সনে দিকা করতে”। গলায় ঝাঁঝালো রপ্ত স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে ঝিমলির পাল্টা
প্রশ্ন, “দেখা করতে – না শরীরটাকে খেতে ?”। “নোকটা নাকি কুতায় বললে
চাকরী করে” – বলে রুমকি। “তা চাকরী করুক আর চুরি-চামারি করুক তা নিয়ে আমার মাথাব্যাথা কিসের?” বলে ঝিমলি। “না তা ঠিক নয়– লোকটা বলল কি, তকে নাকি উ চেনে” – এক নাগাড়ে বলে চলে রুমকি। “কত মরদই তো রোজ আসে যায়,
তা আমাকে চেনে তো হয়েছেটা কি?” – পাল্টা প্রশ্ন ঝিমলির।
দু’জনে আসে সরু গলি বেয়ে রাস্তার বাঁকের মুখে। লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে ঝিমলির
গা যেন ছ্ম করে ওঠে। এই সেই তার অমিত না ? না এরকম আর তার ভাবা চলে না। এখন অন্য কারো ! তাছাড়া সে এরকম ভাববেই বা কেন – বিবেক তাকে সংযমী
করে। অমিতের এবারেও বোধ হয় ভুল হল – “না এ তো সেই তার রিমঝিম নয়”। বারো বছর আগে
অমিতের রিমঝিম যেমন ছিল, সে তেমন ভাবেই দেখতে চাইল।
কিন্তু কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে তার ঘাত প্রতিঘাত সামাল দিতে দিতে রিমঝিম যে
ঝিমলিতে পরিণত হতে পারে এই ভাবনাটুকু ভাবতে পারেনা অমিত। গলির
হাঁটাপথ ধরে তিনজনে এগিয়ে যায় গন্তব্যস্থলে। রুমকি বলে যায়, “ভাল ভাবে সেবা করিস লো বাবুকে – দেখিস যেন মান থাকে”।
অমিত বিছানায় মগ্ন ঝিমলির
দেহ নিয়ে । ঝিমলি তার
ভালবাসার মানুষটাকে পেয়ে স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে হারিয়ে যায় রিমঝিমে। ফিকে মোমবাতির আলোয় অমিতের চোখ পড়ে ঝিমলির বাঁ স্তনের গাঢ় বাদামী বৃত্তের উপর কাটা দাগে। অমিতের মনে পড়ে যায়
প্রথম মিলনের সেই স্মৃতি। রিমঝিমকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে সুতীব্র আকর্ষণ ও
সেইসঙ্গে তার স্তন যুগলে ঠোঁট চালনা করতে করতে চরম আনন্দের মুহূর্ত ও সেই সঙ্গে
আবেগবশে স্তনে দাঁতের দংশন। অমিত চিনতে পারে তার রিমঝিমকে।
অমিত জিজ্ঞেস করে –
“রিমঝিম তোমার এই অবস্থা কি করে হ’ল ?” এক নিমেষ দু’জনেই চুপ। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে দু’জন একে অপরের প্রতি। একটা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে ঝিমলি বলে চলে – “কি.........কিছু বললেন ?”
অমিতের মন বলল সে ঠিকই চিনেছে, ওই তো সেই উজ্জ্বল চোখ, যদিও চোখের নীচে আজ কালি।
ঝিমলি প্রথমে ধরা দিতে চায়নি। কিন্তু বোধহয় এমনটায় হয়। অবচেতন মনের চেতনায়
আপ্লুত রিমঝিম ধরা দেয় অমিতের কাছে।
“আগে তুমি বল তোমার স্ত্রীকে এইভাবে ঠকানোর মানে কি? তার তো কোন দোষ নেই”— কথাগুলো অস্ফুটে বের হয়ে আসে
ঝিমলির মুখ থেকে।
“বিয়েই করলাম না, তাই আবার স্ত্রী কে ঠকানোর প্রশ্ন?” – অমিতের মুখ দিয়ে বেরোয় কথা ক’টি সঙ্গে দীর্ঘশ্বাস। “এই দাগ দেখেই আমার স্বামী মানে বিপুল চৌধুরী আমাকে সন্দেহ করে। আসলে আমি ওকে ঠকাতে চায়নি – বাবার মুখ চেয়ে বাধ্য হই ওকে বিয়ে করতে। তারপর যা হবার হ’ল” – এক নাগাড়ে বলে চলে ঝিমলি। এক মুহূর্ত নিশ্চুপ থেকে ঝিমলি বলে, “তুমি বিয়ে করে সংসারী হও, এইভাবে নিজেকে শেষ করে দিও না”। “কথাগুলো তো তোমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য” – পাল্টা জবাব অমিতের।
“বিয়েই করলাম না, তাই আবার স্ত্রী কে ঠকানোর প্রশ্ন?” – অমিতের মুখ দিয়ে বেরোয় কথা ক’টি সঙ্গে দীর্ঘশ্বাস। “এই দাগ দেখেই আমার স্বামী মানে বিপুল চৌধুরী আমাকে সন্দেহ করে। আসলে আমি ওকে ঠকাতে চায়নি – বাবার মুখ চেয়ে বাধ্য হই ওকে বিয়ে করতে। তারপর যা হবার হ’ল” – এক নাগাড়ে বলে চলে ঝিমলি। এক মুহূর্ত নিশ্চুপ থেকে ঝিমলি বলে, “তুমি বিয়ে করে সংসারী হও, এইভাবে নিজেকে শেষ করে দিও না”। “কথাগুলো তো তোমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য” – পাল্টা জবাব অমিতের।
তাই কি সম্ভব? এই পরেও তুমি......একথা তুমি বললে?
কেন অসম্ভব? পৃথিবীতে অসম্ভব বলে তো কিছু নেই!
জানো তো তোমার কথা আমার সব সময় মনে পড়ে।
আমারও পড়ে
বাইরে আবার ঝম্ঝম্ করে
বৃষ্টি শুরু হ’ল। দূরে রেললাইনটা ধরে একটা মালগাড়ী -ঝিক-ঝিককু আওয়াজ করতে করতে চলে যাচ্ছে। আর এই কোঠা বাড়িটা কেঁপে কেঁপে উঠছে, হয়তো বা তাদের কথা শুনে।
অমিত বলে, “আচ্ছা, আমরা কি পারি না সেই আগের মতো দু’জন দু’জনকে.........ইয়ে...মানে, আমরা কি বিয়ে করে সব কিছুকে নতুন ভাবে শুরু করতে পারি না ?
তুমি চাইলে ......”
কথাটা শেষ না হতেই ঝিমলি
ধরা গলায় ঢোক গিলে বলে, “তা কি করে সম্ভব? আমি তো এখন একটা নষ্ট মেয়ে ছাড়া আর কিছুই নই”। অমিত,
“তাই যদি বল, তবে আমিও তাই। তোমার এই
অবস্থার কথা শুনে আমিও উৎশৃঙ্খল জীবন বেছে নিয়েছি, বহু বেশ্যার সঙ্গে মেলামেশা করেছি, ঘনিষ্ঠ হয়েছি –
কেন জানো? – আমার রিমঝিমকে খোঁজার জন্য।
আজ আমি আমার সেই হারিয়ে যাওয়া রিমঝিমকে পেয়ে আর হারাতে চাই না”।
এরপর দু’টি শরীর মিশে যায় এক হয়ে।
শুধু শরীর নয় মনও।
বাইরে সুপুরি গাছের সারি
নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক পশলা বৃষ্টি মেখে।
এ বি এম সোহেল রশিদ
হিমেলের
হীম কান্না
ক্রিং ক্রিং মোবাইল বাজছে।অপরিচিত নাম্বার সাধারণত ধরি না । তাই ধরলাম
না। আবার বাজলো অন্য নাম্বার থেকে এটাও অপরিচিত। কিছুক্ষণ পর আবার বাজলো। এটা
বিদেশি নাম্বার । সম্ভবত থাইল্যান্ডের । বিদেশী নাম্বার যখন, তখন ধরি। ইতস্তত করতে করতে কেটে গেল ।
কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার ফোন বাজল । একই নাম্বার। ধরলাম
-হ্যালো ?
-কি ফোন ধরেন না কেন । আমি হিমেল।
-তোমার নাম্বার আমি চিনি । এ নাম্বার আমার কাছে
নেই বুঝবো কি করে।
- শুনেন আমার একটা কাজ করে দিতে হবে। বিয়ে করুম ।
বিয়ে পড়িয়ে দিবেন।- কি বল
তুমি থাক ব্যাংকক । আমি কি করে বিয়ে করিয়ে দিব। মেয়েইবা পাব কোথায়? আর তুমি কি আসলেই বিয়ে করবে?
- সিরিয়াস। বিয়ে ঠিকঠাক। পাত্রীও ঠিক । আপনি শুধু
বিয়ে করিয়ে দিবেন
- আরে আমি কি কাজী নাকি? তোমাকে বিয়ে করিয়ে দিব। আর খুলেই বল । আসল
ঘটনাটা কি?
- সব বলব। রাতে ফোন রিসিভ কইরেন। এখন একটা নাম্বার
রাখেন এই হল আমার হবু বৌ। ও ই আপনাকে ফোন করবে। ঢাকায় বিদেশী একটা ফার্মে চাকুরী
করে। ব্যাংককেই আমার সাথে পরিচয়। ওর বাসারও কেউ রাজি নয় আমার বাসারও কেউ রাজি নয়।
বুঝতেই পারছেন কি বিপদে আছি। সত্যি কথা বলতে কি আমার বাসায় জানাতেই সাহস পাই নি। বাকি
কথা রাতে বলবো। এখন
একটা কাজ আছে। রাতে কথা হবে। আস্ সালামু আলাইকুম বলে ফোন কেটে দিল।
রাকিব সাহেব ভাবনায় পড়ে গে্লেন । এ কেমন কথা। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ বিয়ে করিয়ে দিন। উটকো ঝামেলা। এমনিতেই সাত পাঁচে জড়াতে চান না। নিজেকে সব সময় অন্য সবার চেয়ে আলাদা করে রাখেন। গো বেচারা টাইপের হলেও মানুষের ধারনা তার বুদ্ধি একটু বেশী। বেশী বুদ্ধির লোকেরা নাকি বিপদজনক হয়। ভাবতে ভাবতে কখন এসে পরেন মতিঝিলে টেরই পান নি। ড্রাইভারের ডাকে সম্বিত ফিরে পান। আজ আর অফিস করতে ভাল লাগছে না। এমনি ডলারের দাম উঠা নামা করায় আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে তেমন সুবিধা করতে পারছেন না রাকিব সাহেব। ব্যবসায় মন্দা ভাবটা অনেক দিন ধরেই । তার পরও ধরে রেখেছেন সুদিনের আশায়। কর্মচারীরাও দায় গোছের কাজ করছে । তিনি বুঝতে পারেন অফিসের কনফিডেন্সিয়াল নিউজ গুলো অফিসের কেউ এক জন প্রতিদ্বন্দ্বী অফিসের লোকদের কাছে অর্থের বিনিময়ে পাচার করে দিচ্ছে। কে করতে পারে তাও অনুমান করতে পেরেছেন। কিন্তু ব্যবস্থা যে নিবেন তাও পারছেন না । অফিসের ভিতরে সেই সবচাইতে বেশী কাজ করে। দু’একটা ব্যবসা যা ও হচ্ছে তা তারই বদৌলতে। বাড়তি চাপ একদম সইতে পারেন না। তবু যে কাজ করেন মনোযোগের সাথে নিখুঁত ভাবে করেন। বিয়ে করানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলেও এ রকম এক পক্ষ একদম অপরিচিত, এমন ঝামেলায় কখনও পড়েন নাই। তাছাড়া মেয়ে পক্ষ সম্বন্ধে কিছুই জানেন না। একেবারে অন্ধকারে থেকে কি ভাবে এ কাজটি করবেন। তাছাড়া হিমেলের পরিবারই বা বিষয়টা কি ভাবে নিবে। বোঝে উঠতে পারছেন না। হিমেলকে না করে দেবেন ভাবছেন। কিন্তু তিনি জানেন সব জায়গায় ব্যর্থ হয়েই তার শরণাপন্ন হয়েছে । তাছাড়া গোপন রাখার বিষয় যদি থাকে তাহলে তিনি ছাড়া তার কাছে বিকল্প নেই। আচ্ছা এতোই বা ভাবছেন কেন। আগে সব খুলে বলুক তার পর দেখা যাবে।
রাকিব সাহেব ভাবনায় পড়ে গে্লেন । এ কেমন কথা। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ বিয়ে করিয়ে দিন। উটকো ঝামেলা। এমনিতেই সাত পাঁচে জড়াতে চান না। নিজেকে সব সময় অন্য সবার চেয়ে আলাদা করে রাখেন। গো বেচারা টাইপের হলেও মানুষের ধারনা তার বুদ্ধি একটু বেশী। বেশী বুদ্ধির লোকেরা নাকি বিপদজনক হয়। ভাবতে ভাবতে কখন এসে পরেন মতিঝিলে টেরই পান নি। ড্রাইভারের ডাকে সম্বিত ফিরে পান। আজ আর অফিস করতে ভাল লাগছে না। এমনি ডলারের দাম উঠা নামা করায় আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে তেমন সুবিধা করতে পারছেন না রাকিব সাহেব। ব্যবসায় মন্দা ভাবটা অনেক দিন ধরেই । তার পরও ধরে রেখেছেন সুদিনের আশায়। কর্মচারীরাও দায় গোছের কাজ করছে । তিনি বুঝতে পারেন অফিসের কনফিডেন্সিয়াল নিউজ গুলো অফিসের কেউ এক জন প্রতিদ্বন্দ্বী অফিসের লোকদের কাছে অর্থের বিনিময়ে পাচার করে দিচ্ছে। কে করতে পারে তাও অনুমান করতে পেরেছেন। কিন্তু ব্যবস্থা যে নিবেন তাও পারছেন না । অফিসের ভিতরে সেই সবচাইতে বেশী কাজ করে। দু’একটা ব্যবসা যা ও হচ্ছে তা তারই বদৌলতে। বাড়তি চাপ একদম সইতে পারেন না। তবু যে কাজ করেন মনোযোগের সাথে নিখুঁত ভাবে করেন। বিয়ে করানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলেও এ রকম এক পক্ষ একদম অপরিচিত, এমন ঝামেলায় কখনও পড়েন নাই। তাছাড়া মেয়ে পক্ষ সম্বন্ধে কিছুই জানেন না। একেবারে অন্ধকারে থেকে কি ভাবে এ কাজটি করবেন। তাছাড়া হিমেলের পরিবারই বা বিষয়টা কি ভাবে নিবে। বোঝে উঠতে পারছেন না। হিমেলকে না করে দেবেন ভাবছেন। কিন্তু তিনি জানেন সব জায়গায় ব্যর্থ হয়েই তার শরণাপন্ন হয়েছে । তাছাড়া গোপন রাখার বিষয় যদি থাকে তাহলে তিনি ছাড়া তার কাছে বিকল্প নেই। আচ্ছা এতোই বা ভাবছেন কেন। আগে সব খুলে বলুক তার পর দেখা যাবে।
আজকে
একটু আগে ভাগেই অফিস থেকে বের হলেন। সিরাজকে খুঁজে বের করতে হবে। হিমেলের সাথে তার
একটা গভীর সম্পর্ক আছে। সম্পর্কটা কিসের তা পরিষ্কার নয় । এ নিয়ে কয়েকবার প্রশ্ন
করেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়া ভাল । দু’জনের বয়সের ব্যবধান বিশ বছরের কম নয় কিন্তু চলেন
এক সাথে। বহু রাত এক সাথে আড্ডা মেরে কাটিয়ে দিয়েছেন।দুরন্ত যারা তারা মনের দিক
থেকে যতটা খোলা মেলা হওয়া দরকার ঠিক ততোটা খোলামেলা নয়। সব সময় হিসেব করে পা ফেলা
হিমেলের অভ্যাস। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করতে চাওয়ার মধ্যে তার স্বভাব সুলভ কোন
আচরণেরই মিল খুঁজে পাচ্ছি না।
গুলশানের
একটা ক্লাব আছে । কিছু রাজনীতিক তাদের আড্ডা মারার জন্য এ ক্লাবের
গোড়াপত্তন ঘটায়। নিরিবিলি আড্ডা মারার জন্য ভাল । আজকাল ক্লাব মানেই সস্তায় মদ পান
করার একটা নিরাপদ আশ্রয়। সে দিক থেকে এ ক্লাব অনেকটাই নিরিবিলি ও নিরাপদ। রিসেপসনে
খোঁজ করতেই সিরাজকে পাওয়া গেল । ভিতরে ঢুকেই দেখলাম একাই বসে আছেন । কিছুক্ষণ আগেই
এসেছেন। আজ ক্লাবে হাউজি খেলা । তাই সবাই হল রুমে । এ দিকটা নিরিবিলি। আমাকে দেখেই
হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল –
- কেমন আছ?
- ভাল। আজকাল আমার এখানে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছ।
- না এখন আর বাসা থেকে বেশী বের হই না। সন্ধ্যায়
ক্লাব আর বাসা ব্যাস এ পর্যন্ত।
- হুম বুঝলাম।
- তা চলবে নাকি?
- হ্যাঁ চলবে আগের মত
- তোমার তো সেভেন আপ লাইট আর চিকেন সালাদ
- হ্যাঁ তাই । তুমি খাও তবে কম করে খাও
- না এখন আর আগের মত চলে না ওই তিন থেকে চার টা।
অর্ডার দিল। ড্রিংকস চলে এসেছে। খাবার
একটু পরে আসবে। সিরাজ চুমুক দিয়ে জিগ্যেস করল।
- হঠাৎ কি মনে করে। কোন খবর না দিয়েই সরাসরি।
এনিথিং রঙ।
- না । সব ঠিক আছে। এমনি আসলাম। মনে পড়লো তাই। মনে
মনে ভাবছি। ঠিক বুঝে
উঠতে পারছি না হিমেলের বিষয়টা বলা ঠিক হবে কি না। এরই মধ্যে ওয়েটার চিকেন সালাদ
দিয়ে গেল সাথে ছোলা সিদ্ধ। এটা এখানে সবার কমন খাবার। এলকোহলের সাথে এর কি যোগ
সূত্র আছে তা যারা খান শুধু তারাই জানেন। সাত পাঁচ ভেবে লাভ নেই।সমস্যা বুকে পুষলে
এর শাখা প্রশাখা গজায়। অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা মাথায় আসে। অজানা ভয় এস ভর করে। বলেই
ফেলি। সব শুনে
মৃদু হাসলেন আসলাম সাহেব। ‘আরে এ কোন ব্যাপারই না’। আসলে
আমি ভাবছি বিয়ে করাতে গেলে একজন অভিভাবক লাগে । এ ধরনের বিয়েতে ওর পরিবারের কেউ
রাজি হবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া বিষয়টা আমি আর কাউকে জানাতে চাচ্ছি না।
‘নো প্রবলেম! আমি আছি না জাতীয় অভিভাবক হা হা হা হা । দূর মিয়া এত চিন্তা করার কি হল’? বলেই এক চুমুকে দ্বিতীয় পেগ শেষ করল। যাক আপাতত একটা চিন্তা দূর হল। আপাতত বললাম এই জন্য যে নেশায় কত কিছুই বলে মানুষ । সকালেই সব ভুলে যায়। তবে আসলামকে যতটুকু চিনি সে এ ধরনের না। তবু আশংকা থেকেই যায়। আরেক পেগ এরই মাঝে নিয়ে এসেছে ওয়েটার। চুমুক দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল আসলাম ‘কাজী পরিচিত আছে’?
‘নো প্রবলেম! আমি আছি না জাতীয় অভিভাবক হা হা হা হা । দূর মিয়া এত চিন্তা করার কি হল’? বলেই এক চুমুকে দ্বিতীয় পেগ শেষ করল। যাক আপাতত একটা চিন্তা দূর হল। আপাতত বললাম এই জন্য যে নেশায় কত কিছুই বলে মানুষ । সকালেই সব ভুলে যায়। তবে আসলামকে যতটুকু চিনি সে এ ধরনের না। তবু আশংকা থেকেই যায়। আরেক পেগ এরই মাঝে নিয়ে এসেছে ওয়েটার। চুমুক দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল আসলাম ‘কাজী পরিচিত আছে’?
- একজনকে চিনি। মিরপুর থাকে। ওই এলাকার কাজী।
হাজী গিয়াস উদ্দিন।ফোন নাম্বার আছে।
- ফোন করে দেখ ।
- তা করতে পারি। এখন করব?
- হ্যাঁ এখনই কর মোবাইলের ফোন বুকে নাম্বারটা খুঁজে পেতে
বেশী সময় লাগল না। রিংটোন বাজতেই ও প্রান্ত থেকে চিৎকার করে বলতে লাগল।
- আস্-সালামু- আলাইকুম বড় ভাই। কেমন আছেন। অনেক দিন পর। বলেন
কি খেদমত করতে পরি। এই কাজীর এই একটা সমস্যা। সবাইকে মনে করে
মক্কেল।কানে বোধ হয় কম শুনে । নতুবা মোবাইলের কোন সমস্যা হবে।
- না ভাই আমি ভাল আছি। ভাই বিয়ে পড়াতে হবে।
- এ বয়সে আবার বিয়ে করবেন। - আরে না না আমার না।
- আরে আপনার সাথে একটু মশকরা করলাম। এতে দুজনের
সম্পর্ক আরও সহজ হবে। সব খুলে বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। মনে মনে ভাবলাম
বিচিত্র মানুষ বিচিত্র তাদের যুক্তি।
- ছেলে বিদেশে । মেয়ে এখানে বিয়েতে কি লাগবে।
- কোথায় হবে?
- কোথায় হবে মানে আপনার ওখানেই হবে। ঝামেলা করতে
চাই না।
- ঠিক আছে। একজন সাক্ষী নিয়ে চলে আসবেন । বয়সের
সার্টিফিকেট বা একাডেমিক সার্টিফিকেট । বাকি
সব আমি সামলে নিব। আচ্ছা ভাইজান কোন ঝামেলা নাইত ।
- আরে না । আপনাকে বিস্তারিত কাল জানাবো। এমনও
হতে পারে কালই বিয়ে।
- এটা কোন ব্যাপার না আমাকে শুধু ফোন করে
জানাবেন । ব্যাস।
- কাজীর ব্যবস্থা হল। অভিভাবকের ব্যবস্থা হল। এবার চল ফিরে যাই ।
- তুমি যাও আজ আমার যেতে একটু দেরী হবে
- ঠিক আছে আমি গেলাম। গাড়ীতে উঠে বাসার দিকে যেতে
বললাম । ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করল। রাত তখন প্রায় বারটা হবে। ঘড়ি দেখতে ইচ্ছে
করছে না। তবু সামনে গাড়ির ঘড়িটা দেখলাম। এগারটা চুয়ান্ন। আচ্ছা এখনও তো ফোন করল না হিমেল। হয়ত
করবে আরও রাতে । না করলেও ভাল । উটকো ঝামেলা থেকে বেঁচে যাই। এ বয়সে এখন আর এসব
ভাল লাগে না। খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেল। রাতে হিমেলের ফোন না আসাতে একটা অস্বস্তি
কাজ করছে। কালকের নাম্বারটা তো সেইভ করে রাখা হয় নাই। ওর একটা নাম্বার আছে ফোন করে
দেখব। ফোন করা কি ঠিক হবে। কিন্তু সময়ের সাথে আমার অস্বস্তি বাড়তে লাগলো।ফোন করেই
দেখি। রিং হয় কেউ ধরে
না। আবারও রিং করি। না কেউ ধরে না। কি রা যায়। দারোয়ান এসে আজকের পত্রিকা দিয়ে
যায়। পত্রিকার হাতে নিতেই দেখি সড়ক দুর্ঘটনার খবর। খবরটি হুবহু এরকম ।
‘থাইল্যান্ডে এক বাংলাদেশীর মৃত্যু’ ঢাকা, ১৪ মে :- থাইল্যান্ডের পর্যটন শহর
পাতাইয়ার এক হোটেলে অজ্ঞাত নামা এক বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। ওই হোটেলের কক্ষ থেকে
উদ্ধার করা হয়েছে অন্য দুই বাংলাদেশীকে। এ দু’জন রয়েছেন অচেতন। গতকাল থাইল্যান্ডের
অনলাইন পাতাইয়া নিউজ এ খবর দিয়েছে। ১০ই মে তারা পর্যটন নগরী পাতাইয়ায় যান। ১১ই মে
তাদের উদ্ধার করা হয়। ১০ই মে তারা মধ্য পাতাইয়ার বেলা এক্সপ্রেস হোটেলের পাঁচ তলার
একটি বড় কক্ষে ওঠেন। ১১ই মে সকালে তাদের সাড়া না পেয়ে দরজা খুলে একজনকে মৃত,
বাকি দুজনকে
সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পাওয়া যায়। হোটেলের কর্মীরা জানান, ১০ই মে রাত একটার দিকে একজন থাই
যৌনকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে হোটেলে ঢোকেন তারা। হোটেলের নিয়মানুযায়ী ওই তরুণী তার
পরিচয়পত্র কাউন্টারে জমা রাখেন। ১১ই মে ভোরে কাউন্টার থেকে পরিচয়পত্র না নিয়েই
একটি বড় ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যান ওই তরুণী। পাতাইয়া পুলিশ জানিয়েছে, ওই কক্ষটির সবকিছুই ছিল এলোমেলো। তিন
বাংলাদেশীর লাগেজগুলো বলপ্রয়োগে খোলা হয়েছে। কক্ষের সিন্দুকটিও ভাঙা পাওয়া গেছে।
জিনিসপত্র কক্ষে ছড়ানো-ছিটানো ছিল। বাথরুমে ১০টি খালি বিয়ারের ক্যান পাওয়া গেছে।
ওই তিনজনকে বিয়ারে মিশিয়ে শক্তিশালী চেতনা নাশক বা অবশকারী দ্রব্য প্রয়োগ করে সব
লুটে নিয়ে গেছেন ওই তরুণী। এছাড়া ওই তিনজনের ব্যাগের মধ্যে বেশকিছু সাধারণ ওষুধও
পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজনের ব্যাগের মধ্যে পাওয়া গেছে হাঁপানির ওষুধ। হাঁপানির ঔষধটাই
খটকা লাগার মূল কারণ। হিমেলকে সব সময় ইন হেলার সাথে রাখতে দেখেছি। যদিও এর
ব্যাবহার আমার সামনে চোখে পড়ে নি। হিমেলতো গতকাল ব্যাংকক ছিল। পাতাইয়াতে গেলে তো ও আমাকে ফোন জানাত।
অন্য কেউ হবে। কিন্তু আমার ফোন রিসিভ করছে না কেন? এমন সময় ফোন বাজে। নাম্বার না দেখেই দ্রুত
রিসিভ করি । জিজ্ঞাসা করি “হ্যালো, হ্যালো কে বলছেন”। এটি মেয়ের কণ্ঠ।
-
আমি নবিতা । হিমেল আপনাকে ফোন করতে বলেছে। - হ্যাঁ তুমি কি হিমেলের...
- জি আমি হিমেলের বাগদত্তা ছিলাম। - ছিলাম মানে - কাল রাতে বাবা মা তাদের পছন্দের ছেলের সাথে জোর করে আমার বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আমি সবার অগোচরে বিষয়টি আপনাকে জানালাম। আমাকে ফোন ব্যাবহার করতে দিবে না। আমার মোবাইলে যে ব্যালেন্স আছে তা দিয়ে থাইল্যান্ডে ফোন করা সম্ভব নয়। তাই আপনাকে জানালাম। আমি অসহায়।
কি বলব কি বলা উচিত কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। সান্ত্বনা দেব নাকি ধিক্কার দেব ।- ঠিক আছে। আমি বলে দেব। - আমাকে ক্ষমা করতে বলবেন।
বেলা বারটার দিকে একটা ফোন আসে। । থাইল্যান্ডে থেকে অপরিচিত নাম্বার। রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে হিমেলের কণ্ঠ। “ভাইজান ফোন দিচ্ছিলেন দেখছি। কিন্তু নবিতাকে পাচ্ছিনা । ওর ফোন বন্ধ। তাই আপনাকে ফোন করি নাই। জানি না কি করব। ওর কেন বিপদ হয় নি তো”।
- দেখ হিমেল মানুষের বিপদ হতে কতক্ষণ। - আমি দেশে চলে আসব । টিকেট বুকিং দিয়ে দিয়েছি পরশু বা তার পরের দিন ফ্লাইট কনফার্ম হয়ে যাবে।আমি আসছি তারপর সব কথা হবে। - তুমি শান্ত হও । এখন আর আসার দরকার নেই। আমি সব ঠিক করে তোমাকে আসতে বলবো।
- সব ঠিক করবেন মানে । - তোমার জন্য মেয়ে দেখবো। - মেয়ে দেখবো, কি বলছেন আপনি? - হ্যাঁ নবিতার সাথে আমার কথা হয়েছে । ওর গতকালই বিয়ে হয়ে গেছে। - কি বলছেন আপনি । না আমি বিশ্বাস করি না । আপনি মিথ্যে বলছেন। - শান্ত হও হিমেল শান্ত হও। ভালবাসা মানে শুধু বিয়েতেই সীমাবদ্ধ নয় । ভালবাসা এক অপরের মঙ্গল কামনাতেও প্রকাশ পায়।
- রাকিব ভাই আপনি জানেন না ও আমাকে কতটা ভাল বাসত।
- দেখ আমাদের সমাজে মেয়েদের মতামতের কি কোন মূল্য আছে। বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের মতামতের যেখানে সবচেয়ে বেশী দরকার সেখানেই তারা সবচেয়ে উপেক্ষিত। আমার চোখেও অশ্রু। আমি কাঁদছি কেন ? আমার কান্না করার কোন যুক্তি নেই। কিন্তু কি করবো আমার চোখে বৃষ্টি নেমেছে আজ । ঝরুক বৃষ্টি। হিমেল আর কথা বলতে পারল না। ওর চোখে অশ্রু আর বুকের ঝড় আমি অনুভব করতে পারি। হিমেলের ভালবাসা হীমখণ্ডের নীচে চাপা পড়েছে। বিদেশ বিভূঁয়ে হিমেলের হীম কান্না শুনবে না কেউ। এ এক অসহনীয় যন্ত্রণা।
আগের সংখ্যা (৩৬তম সংখ্যা) দেখুন এখানে ক্লিক করে
http://galpogucchho.blogspot.in/2012/10/blog-post_7527.html
- জি আমি হিমেলের বাগদত্তা ছিলাম। - ছিলাম মানে - কাল রাতে বাবা মা তাদের পছন্দের ছেলের সাথে জোর করে আমার বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আমি সবার অগোচরে বিষয়টি আপনাকে জানালাম। আমাকে ফোন ব্যাবহার করতে দিবে না। আমার মোবাইলে যে ব্যালেন্স আছে তা দিয়ে থাইল্যান্ডে ফোন করা সম্ভব নয়। তাই আপনাকে জানালাম। আমি অসহায়।
কি বলব কি বলা উচিত কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। সান্ত্বনা দেব নাকি ধিক্কার দেব ।- ঠিক আছে। আমি বলে দেব। - আমাকে ক্ষমা করতে বলবেন।
বেলা বারটার দিকে একটা ফোন আসে। । থাইল্যান্ডে থেকে অপরিচিত নাম্বার। রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে হিমেলের কণ্ঠ। “ভাইজান ফোন দিচ্ছিলেন দেখছি। কিন্তু নবিতাকে পাচ্ছিনা । ওর ফোন বন্ধ। তাই আপনাকে ফোন করি নাই। জানি না কি করব। ওর কেন বিপদ হয় নি তো”।
- দেখ হিমেল মানুষের বিপদ হতে কতক্ষণ। - আমি দেশে চলে আসব । টিকেট বুকিং দিয়ে দিয়েছি পরশু বা তার পরের দিন ফ্লাইট কনফার্ম হয়ে যাবে।আমি আসছি তারপর সব কথা হবে। - তুমি শান্ত হও । এখন আর আসার দরকার নেই। আমি সব ঠিক করে তোমাকে আসতে বলবো।
- সব ঠিক করবেন মানে । - তোমার জন্য মেয়ে দেখবো। - মেয়ে দেখবো, কি বলছেন আপনি? - হ্যাঁ নবিতার সাথে আমার কথা হয়েছে । ওর গতকালই বিয়ে হয়ে গেছে। - কি বলছেন আপনি । না আমি বিশ্বাস করি না । আপনি মিথ্যে বলছেন। - শান্ত হও হিমেল শান্ত হও। ভালবাসা মানে শুধু বিয়েতেই সীমাবদ্ধ নয় । ভালবাসা এক অপরের মঙ্গল কামনাতেও প্রকাশ পায়।
- রাকিব ভাই আপনি জানেন না ও আমাকে কতটা ভাল বাসত।
- দেখ আমাদের সমাজে মেয়েদের মতামতের কি কোন মূল্য আছে। বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের মতামতের যেখানে সবচেয়ে বেশী দরকার সেখানেই তারা সবচেয়ে উপেক্ষিত। আমার চোখেও অশ্রু। আমি কাঁদছি কেন ? আমার কান্না করার কোন যুক্তি নেই। কিন্তু কি করবো আমার চোখে বৃষ্টি নেমেছে আজ । ঝরুক বৃষ্টি। হিমেল আর কথা বলতে পারল না। ওর চোখে অশ্রু আর বুকের ঝড় আমি অনুভব করতে পারি। হিমেলের ভালবাসা হীমখণ্ডের নীচে চাপা পড়েছে। বিদেশ বিভূঁয়ে হিমেলের হীম কান্না শুনবে না কেউ। এ এক অসহনীয় যন্ত্রণা।
আগের সংখ্যা (৩৬তম সংখ্যা) দেখুন এখানে ক্লিক করে
http://galpogucchho.blogspot.in/2012/10/blog-post_7527.html
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)